বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য - মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৯৬১).pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
মধুসূদন-গ্রন্থাবলী
১৭৮—২০৭

নিজ দুঃখে কভু নহে কাতর সে জন।
কুলিশ চূর্ণিলে শৃঙ্গ, শৃঙ্গধর সহে
সে যাতনা, ক্ষণমাত্র অস্থির হইয়া;
কিন্তু যবে কেশরীর প্রচণ্ড আঘাতে
ব্যথিত বারণ আসি কাঁদে উচ্চস্বরে
পড়ি গিরিবর-পদে, গিরিবর কাঁদে
তার সহ! মহাশোকে শোকাকুল রথী
দেবনাথ, ইন্দ্রাণীর করযুগ ধরি,
(সোহাগে মরাল যথা ধরে রে কমলে!)
কহিলা দুমৃদু স্বরে;—“হায়, প্রাণেশ্বরি,
বিধির অদ্ভুত বিধি দেখি বুক ফাটে!
শৃগাল-সমরে, দেখ, বিমুখ কেশরী-
বৃন্দ, সুরেশ্বরি, ওই তোরণ-সমীপে
ম্রিয়মাণ অভিমানে। হায়, দেব-কুলে
কে না চাহে ত্যজিবারে কলেবর আজি,
যাইতে, শমন, তোর তিমির-ভবনে,
পাসরিতে এ গঞ্জনা? ধিক্, শত ধিক্‌
এ দেব-মহিমা! অমরতা, ধিক্ তোরে।
হায়, বিধি, কোন্ পাপে মোর প্রতি তুমি
এ হেন দারুণ! পুনঃ পুনঃ এ যাতনা
কেন গো ভোগাও দাসে? হায়, এ জগতে
ত্রিদিবের নাথ ইন্দু, তার সম আজি
কে অনাথ? কিন্তু নহি নিজ দুঃখে দুঃখী।
সৃজন পালন লয় তোমার ইচ্ছায়;
তুমি গড়, তুমি ভাঙ, বজায় রাখহ
তুমি; কিন্তু এই যে অগণ্য দেবগণ,
এ সবার দুঃখ, দেব, দেখি প্রাণ কাঁদে।
তপন-তাপেতে তাপি পশু পক্ষী, যদি
বিশ্রাম-বিলাস-আশে, যায় তরু-পাশে,
দিনকর খরতর-কর সহ্য করি