বাহুবলে,—ত্রিজগৎ লণ্ডভণ্ড করি।”
কহিতে কহিতে ভীমাকৃতি প্রভঞ্জন
নিশ্বাস ছাড়িলা রোষে। থর থর থরে
(ধাতার কনক-পদ্ম-আসন যে স্থলে,
সে স্থল ব্যতীত) বিশ্ব কাঁপিয়া উঠিল!
ভাঙ্গিল পর্ব্বতচূড়া; ডুবিল সাগরে
তরী; ডরে মৃগরাজ, গিরিগুহা ছাড়ি,
পলাইলা দ্রুতবেগে; গর্ভিণী রমণী
আতঙ্কে অকালে, মরি, প্রসবি মরিলা!
তবে ষড়ানন স্কন্দ, আহা, অনুপম
রূপে! হৈমবতী সতী কৃত্তিকা যাঁহারে
পালিলা, সরসী যথা রাজহংস-শিশু,
আদরে; অমরকুল-সেনানী সুরথী,.
তারকারি, রণদণ্ডে প্রচণ্ড-প্রহারী,
কিন্তু ধীর, মলয় সমীর যেন, যবে
স্বর্ণবর্ণা ঊষা সহ ভ্রমেন মারুত
শিশিরমণ্ডিত ফুলবনে প্রেমামোদে;—
উত্তর করিলা তবে শিখীবরাসন
মৃদু স্বরে, যথা বাজে মুরারির বাঁশী,
গোপিনীর মন হরি, মঞ্জু কুঞ্জবনে;—
“জয় পরাজয় রণে বিধির ইচ্ছায়।
তবে যদি যথাসাধ্য যুদ্ধ করি, রথী
রিপুর সম্মুখে হয় বিমুখ সুমতি
রণক্ষেত্রে, কি শরম তার? দৈববলে
বলী যে অরি, সে যেন অভেদ্য কবজে
ভূষিত; শতসহস্র তীক্ষ্ণতর শর
পড়ে তার দেহে, পড়ে শৈলদেহে যথা
বরিষার জলাসার। আমরা সকলে
প্রাণপণে যুঝি আজি সমরে বিরত,
এ নিমিত্তে কে ধিক্কার দিবে আমা সবে?
পাতা:তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য - মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৯৬১).pdf/৫৯
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৮—৩৫৭
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য : দ্বিতীয় সর্গ
৩৭