বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য - মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৯৬১).pdf/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৷৷৹
মধুসূদন-গ্রন্থাবলী

যখন বলিয়াছিলেন, বাংলা ভাষা অমিত্রাক্ষরের পক্ষে সম্পূর্ণ অনুপযোগী, তখন মধুসূদন তাঁহাকে স্মরণ করাইয়া দিয়াছিলেন যে, “বাংলা ভাষা সংস্কৃত ভাষার দুহিতা।” বস্তুতঃ সংস্কৃত ভাষার গাম্ভীর্য্য ও শব্দসম্পদ্ই বাংলা ভাষায় অমিত্রাক্ষর ছন্দ সম্ভব করিয়াছে।

 ১৮৫৯ খ্রীষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে মধুসুদন অমিত্রাক্ষর ছন্দে ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্যে’র প্রথম দুই সর্গ রচনা করেন। ‘বিবিধার্থ-সঙ্গ‍্রহে’র সম্পাদক মনস্বী রাজেন্দ্রলাল মিত্র ১৭৮১ শকাব্দের শ্রাবণ মাসে (১৮৫৯ জুলাই-আগস্ট; ৬ষ্ঠ পর্ব্ব, ৬৪ খণ্ড, পৃ. ৭৯-৮৮) এই কাব্যের প্রথম সর্গটি তাঁহার পত্রিকায় মুদ্রিত করেন। মধুসূদনের নাম ছিল না, রাজেন্দ্রলাল যে ভূমিকাটুকু করিয়াছিলেন, তাহা এখানে উদ্ধৃত হইল—

 কোন সুচতুর কবির সাহায্যে আমরা নিম্নস্থ কাব্য প্রকটিত করিতে সক্ষম হইলাম। ইহার রচনাপ্রণালী অপর সকল বাঙ্গালী কাব্য হইতে স্বতন্ত্র। ইহাতে ছন্দ ও ভাবের অনুশীলন, ও অন্ত‍্য যমকের পরিত্যাগ করা হইয়াছে। ঐ উপায়ে কি পর্য্যন্ত কাব্যের ওজোগুণ বর্দ্ধিত হয় তাহা সংস্কৃত ও ইংরাজী কাব্য পাঠকেরা জ্ঞাত আছেন। বাঙ্গালীতে সেই ওজোগুণের উপলব্ধি করা অতীব বাঞ্ছনীয়; বর্তমান প্রয়াসে সে অভিপ্রায় কি পর্য্যন্ত সিদ্ধ হইয়াছে তাহা সহৃদয় পাঠকবৃন্দ নিরূপিত করিবেন।

 ‘বিবিধার্থ-সঙ্গ‍্রহে’র ৬ষ্ঠ পর্ব্ব, ৬৫ খণ্ডে অর্থাৎ শকাব্দা ১৭৮১ ভাদ্র সংখ্যায় (পৃ. ১০৪-১১১) দ্বিতীয় সর্গ প্রকাশিত হয়। ইহাতেও লেখকের নাম ছিল না। তৃতীয় ও চতুর্থ সর্গ সাময়িক পত্রে প্রকাশিত হয় নাই। সমগ্র চারি সর্গ একেবারে পুস্তকাকারে ১৮৬০ খ্রীষ্টাব্দের মে মাসে কলিকাতা ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস[] হইতে প্রকাশিত হয়; পৃষ্ঠা-সংখ্যা ১০৪। যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর প্রথম সংস্করণ পুস্তক মুদ্রণের ব্যয়ভার বহন করেন।

 মধুসূদনের জীবিতকালে এই কাব্যের আরও দুইটি সংস্করণ হইয়াছিল। দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১২৬৮ সালে, পৃষ্ঠা সংখ্যা ৯৯। এই সংস্করণে মধুসূদন বহুল পরিবর্ত্তন করিয়াছিলেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বন্ধু রাজনারায়ণ বসুকে লেখেন—

  1. যতীন্দ্রমোহন ভুল করিয়া ষ্ট্যানহোপ প্রেস লিখিয়াছেন।