প্রেমে সদা মত্ত ভানু, ইন্দু—ইন্দীবর
গগনের! তারা দল যার সখী-দল!
সাগর যাহারে বাঁধে রজভুজ-পাশে!
সোহাগে বাসুকি নিজ শত শিরোপরি
বসায়! রে অনন্তে, রে মেদিনি কামিনি,
শ্যামাঙ্গি, অলক যার ভূষিতে উল্লাসে
সৃজেন সতত ধাতা ফুলরত্নাবলী
বহুবিধ! আলিঙ্গয়ে ভূধর যাহারে
দিবানিশি! কে আছয়ে, হে দিক্পালগণ,
এ হেন নির্দ্দয়? রাহু শশী গ্রাসিবারে
ব্যগ্র সদা দুষ্ট, কিন্তু রাহু,—সে দানব।
আমরা দেবতা,—এ কি আমাদের কাজ?
কে ফেলে অমূল মণি সাগরের জলে
চোরে ডরি? যদি প্রিয়জন যে, সে জনে
গ্রাসে রোগ, কাটারীর ধারে গলা কাটি
প্রণয়ী-হৃদয় কি গো নীরোগে তাহারে?
আর কি কহিব আমি, দেখ ভাবি সবে।
যদিও মতের সহ মতের বিগ্রহে
(শুষ্ক কাষ্ঠ সহ শুষ্ক কাষ্ঠের ঘর্ষণে
যেমনি) জনমে অগ্নি, সত্যদেবী যাহে
জ্বালান প্রদীপ ভ্রান্তি-তিমির নাশিতে;
কিন্তু বৃথা-বাক্যবৃক্ষে কভু নাহি ফলে
সমুচিত ফল; এ তো অজানিত নহে।
অতএব চল সবে যাই যথা ধাতা
পিতামহ। কি আজ্ঞা তোমার, দেবপতি?”
কহিতে লাগিলা পুনঃ সুরেন্দ্র বাসব
অসুরারি;—“পালিতে এ বিপুল জগত
সৃজন, হে দেবগণ, আমাসবাকার।
অতএব কেমনে যে রক্ষক, সে জন
হইবে ভক্ষক? যথা ধর্ম্ম জয় তথা।
পাতা:তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য - মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৯৬১).pdf/৬২
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
মধুসূদন-গ্রন্থাবলী
৪১৮—৪৪৭