বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য - মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৯৬১).pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
মধুসূদন-গ্রন্থাবলী
২৯৮—৩২৭

কহিতে লাগিলা তবে দেব পুরন্দর
অসুরারি;—“ভাসি আমি অজ্ঞাত সলিলে
কর্ণধার, ভাবনায় চিন্তায় আকুল,
নাহি দেখি অনুকূল কূল কোন দিকে!
কেমনে চালার তরী বুঝিতে না পারি?
কেমনে হইব পার অপার সাগর?
শূন্যতূণ আমি আজি এ ঘোর সমরে।
বজ্রাপেক্ষা তীক্ষ্ণ মম প্রহরণ যত,
তা সকলে নিবারিল এ কাল সংগ্রামে
অসুর। যখন দুষ্ট ভাই দুই জন
আরম্ভিলা তপঃ, আমি পাঠানু যতনে
সুকেশিনী উর্ব্বশীরে; কিন্তু দৈববলে
বিফলবিভ্রমা বামা লজ্জায় ফিরিল,—
গিরিদেহে বাজি যথা রাজীব! সতত
অধীর সুধীর ঋষি যে মধুর হাসে,
শোভিল সে বৃথা, হায়, সৌদামিনী যথা
অন্ধজন প্রতি শোভে বৃথা প্রজ্বলনে!
যে কেশে নিগড় সদা গড়ে রতিপতি;
যে অপাঙ্গবিষানলে জ্বলে দেব-হিয়া;—
নারিল সে কেশপাশ বাঁধিতে দানবে!
বিফল সে বিষানল, হলাহল যথা
নীলকণ্ঠ-কণ্ঠদেশে! কি আর কহিব—
বৃথা মোরে জিজ্ঞাসহ, জলদলপতি।”
এতেক কহিয়া দেব দেবেন্দ্র বাসব
নীরবিলা, আহা, মরি, নিশ্বাসি বিষাদে!
বিষাদে নীরব দেখি পৌলোমীরঞ্জনে,
মৌনভাবে বসিলেন পঞ্চ দেব রথী।
হেন কালে—বিধির অদ্ভুত লীলাখেলা।
কে পারে বুঝিতে গো এ ব্রহ্মাণ্ডমগুলে?—
হেন কালে অকস্মাৎ হইল দৈববাণী।