বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য - মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৯৬১).pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
মধুসূদন-গ্রন্থাবলী
৪১৮—৪৪৭

মরুস্থলে প্রবাহিণী কভু নাহি বহে।
অবিরামে কাটে কীট; পাবক না নিবে।
শত-সিন্ধু-কোলাহল জিনি, দিবানিশি,
উঠয়ে ক্রন্দনধ্বনি কর্ণ বিদরিয়া।
হেরি শমনের পুরী, বিস্ময় মানিয়া
চলিলা জগৎপ্রাণ পুনঃ দ্রুতগতি
যথায় বসেন দেব-শিল্পী। কতক্ষণে
উত্তরমেরুতে বীর উত্তরিলা আসি।
অদূরে শোভিল বিশ্বকর্মার সদন।
ঘন ঘনাকার ধূম উড়ে হর্ম্ম‍্যোপরি,
তাহার মাঝারে হৈম গৃহাগ্র অযুত
দ্যোতে, বিদ্যুতের রেখা অচঞ্চল যেন
মেঘাবৃত আকাশে, বা বাসবের ধনু
মণিময়! প্রবেশিয়া পুরী বায়ুপতি
দেখিলেন চারি দিকে ধাতু রাশি রাশি
শৈলাকার; মূর্ত্তিমান্ দেব বৈশ্বানরে।
পাই সোহাগায় সোণা গলিছে সোহাগে
প্রেম-রসে; বাহিরিছে রজত গলিয়া
পুটে, বাহিরায় যথা বিমল-সলিল-
প্রবাহ, পর্ব্বত-সানু-উপরি যাহারে
পালে কাদম্বিনী ধনী; লৌহ, যার তনু
অক্ষয়, তাপিলে অগ্নি, মহারাগে ধাতু
জ্বলে অগ্নিসম তেজ,—অগ্নিকুণ্ডে পড়ি
পুড়িছে,—বিষম জ্বালা যেন ঘৃণা করি,—
নীরবে শোকাগ্নি যথা সহে বীর-হিয়া।
কাঞ্চন-আসনে বসি বিশ্বকর্ম্মা-দেব,
দেব-শিল্পী, গড়িছেন অপূর্ব্ব গড়ন,
হেন কালে তায় আইলা সদাগতি।
হেরি প্রভঞ্জনে দেব অমনি উঠিয়া
নমস্কারি বসাইলা রত্ন-সিংহাসনে।