“আপন কুশল কহ, বায়ুকুলেশ্বর,”—
কহিতে লাগিলা বিশ্বকর্ম্মা—“কহ বলি,
স্বর্গের বারতা। কোথা দেবেন্দ্র কুলিশী?
কি কারণে, সদাগতি, গতি হে তোমার
এ বিজন দেশে? কহ, কোন্ বরাঙ্গনা—
দেবী কি মানবী—এবে ধরিয়াছে, তোমা
পাতি পীরিতের ফাঁদ? কহ, যত চাহ,
দিব আমি অলঙ্কার, অতুল জগতে!
এই দেখ নূপুর; ইহার বোল শুনি
বীণাপাণি-বীণা, দেব, ছিন্ন-তার, খেদে!
এই দেখ সুমেখলা; দেখি ভাব মনে,
বিশাল নিতম্ববিম্বে কি শোভা ইহার!
এই দেখ মুক্তাহার; হেরিলে ইহারে
উরজ-কমলযুগ-মাঝারে, মনোজ
মজে গো আপনি! এই দেখ, দেব, সিঁথি;
কি ছার ইহার কাছে, ওরে নিশীথিনি,
তোর তারাময় সিঁথি! এই যে কঙ্কণ
খচিত রতনবৃন্দে, দেখ, গন্ধবহ।
প্রবাল-কুণ্ডল এই দেখ, বীরমণি;—
কি ছার ইহার কাছে বনস্থলী-কাণে
পলাশ, রমণী-মনোরমণ ভূষণ!
আর আর আছে যত, কি কব তোমারে?”
হাসিয়া হাসিয়া যদি এতেক কহিলা
বিশ্বকর্ম্মা, উত্তর করিলা মহামতি
শ্বসন, নিশ্বাস বীর ছাড়িয়া বিষাদে;—
“আর কি আছে গো, দেব, সে কাল এখন?
বিশ্বোপান্তে তিমির-সাগর-তীরে সদা
বস তুমি, নাহি জান স্বর্গের দুর্দ্দশা!
হায়, দৈত্যকূল এবে, প্রবল সমরে,
লুটিছে ত্রিদশালয় লণ্ডভণ্ড করি,
পাতা:তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য - মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৯৬১).pdf/৮৩
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪৮—৪৭৭
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য : তৃতীয় সর্গ
৬১