জলাশয়। চারি দিকে শ্যাম তট তার
শত-রঞ্জিত কুসুমে। উজ্জ্বল দর্পণ
বনদেবীর সে সর—খচিত রতনে!
হাসে তাহে কমলিনী, দর্পণে যেমনি
বনদেবীর বদন! মৃদু মন্দ রবে
পবন-হিল্লোলে বারি উছলিছে কূলে।
এই সরোবর-তীরে আসি সীমন্তিনী
(ক্লান্তা এবে) বসিলা বিরামলাভ-লোভে,
রূপের আভায় আলো করি সে কানন।
ক্ষণকাল বসি বামা চাহি সর পানে
আপন প্রতিমা হেরি—ভ্রান্তি-মদে মাতি,
একদৃষ্টে তার দিকে চাহিতে লাগিলা
বিবশে! “এ হেন রূপ”—কহিলা রূপসী
মৃদু স্বরে—“কারো আঁখি দেখেছে কি কভু?
ব্রহ্মপুরে দেখিয়াছি আমি দেবপতি
বাসব; দেবসেনানী; আর দেব যত
বীরশ্রেষ্ঠ; দেখিয়াছি ইন্দ্রাণী সুন্দরী;
দেব-কুল-নারী-কুল; বিদ্যাধরী-দলে;
কিন্তু কার তুলনা এ ললনার সহ
সাজে? ইচ্ছা করে, মরি, কায় মন দিয়া
কিঙ্করী হইয়া ওঁর সেবি পা দুখানি!
বুঝি এ বনের দেবী,—মোরে দয়া করি
দয়াময়ী—জল-তলে দরশন দিলা।”
এতেক কহিয়া ধনী অমনি উঠিয়া
নমাইলা শির—যেন পূজার বিধানে,
প্রতিমূর্ত্তি প্রতি; সেও শির নমাইল!
বিস্ময় মানিরা বামা কৃতাঞ্জলিপুটে
মৃদু স্বরে সুধিলা—“কে তুমি, হে রমণি?”
আচম্বিতে “কে তুমি? কে তুমি, হে রমণি—
হে রমণি?” এই ধ্বনি বাজিল কাননে!
পাতা:তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য - মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৯৬১).pdf/৯৮
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
মধুসূদন-গ্রন্থাবলী
২৩৮—২৬৭