পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণান্ধুর G অন্তসুৰ্য্যের রং ফোটেনি-কেন তা জানি না । ডাঃ রায়ের সঙ্গে বর্তমান কালের তরুণ সাহিত্য সম্বন্ধে বহুক্ষণ আলোচনা হোল-তীর মত ভারী পাকা ও যুক্তিপূর্ণ। সকালে সকালে ফিরলাম, তিনি আবার বৌবাজারের দোকানটা থেকে খাবার। কিনলেন। আমায় বল্লেন, মাঝে মাঝে দেখা করবার জন্যে। জীবনে যদি কাউকে শ্ৰদ্ধা করি, তবে সে এই ডাঃ পি. সি. রায়কে। সত্যিকার মহাপুরুষ। বহু সৌভাগ্যে। তবে দর্শনলাভ ঘটে, একথা আমি মনে প্ৰাণে বিশ্বাস করি। অধিকক্ষণ কথাবাৰ্ত্তী কইবার পরে মনে হয় যে সত্যিই কিছু নিয়ে ফিরুচি। আজ প্ৰবাসীতে গিয়ে* বইটার প্রথম ফৰ্ম্মাট ছাপা হয়েচে দেখে এলুম। সে হিসাবে আমার সাহিত্য-জীবনের আজ একটা স্মরণীয় দিন। ওটা ওদের ওখানে কাল শনিবারে পড়া হবে । ডাঃ কালিদাস নাগ ও সুনীতিবাবু কাল থাকবেন বলেচেন । সেখান থেকে গেলুম দক্ষিণাবাবুর গৃহ-প্ৰবেশের নিমন্ত্রণে কালিঘাটে । সুরেশানন্দের ছোট এক বছরের খোকাটা কি সুন্দর হয়েচে । ওকে কোলে নিয়ে চাঁদ দেখালুম-ভারী তৃপ্তি হোল তাতে। এরা সব কোথা থেকে আসে ? কোন মহান আর্টিষ্টের সৃষ্টি এরা ? অনন্ত আকাশে কালপুরুষের জ্যোতিৰ্ম্ময় অনল জলতে দেখোঁচি, পূর্ব দিকপালের আগুন অক্ষরে সঙ্কেত দেখোঁচি, কিন্তু সে রুদ্র বিরাটতার পিছনে এই সব সুকুমার শিল্প কোথায় লুকানো থাকে ? কি হাসি দেখলুম ওর মুখে ! কি তুলতুলে গাল! -- একটা উপমা মনে আসচে। আমাদের দেশের বারোয়ারীর আসরে কে যেন রবিবাবুর মুক্তধারা থেকে ‘নমো যন্ত্র, নমো যন্ত্র, নমো যন্ত্র’ ওই গানটী আবৃত্তি করচেন। ওর ধ্বনির সঙ্গে ভাবের অপূর্ব যোগ, ওর মধ্যে যে অদ্ভুত ক্ষমতা ও চাতুৰ্য্য প্ৰমাণ পেয়েচে, তা কে বুঝচে ? কিন্তু হয়তো এক কোণে এক নিরীহ ব্ৰাহ্মণপণ্ডিত বসে আছেন-আসার-ভরা দোকানদার দলের মধ্যে তিনিই একমাত্র নীরব রস গ্রাহী, কবির ক্ষমতা বুঝাচেন তিনি। চোখ তার জলে ভাসচে, বুক দুলে উঠচে । বিশ্ব-সৃষ্টির এই অসীম চাতুৰ্য্য, এই বিরাট শিল্প-কৌশল, এই ইন্দ্ৰিয়াতীত সৌন্দৰ্য্য-ক’জন বুঝবে ? দোকানদার দলের মত হাততালি দিচ্চে হয়তো

  • পথের পাঁচালী