তৃণান্ধুর সাফল্যে, সুখে সম্পদে ভরা, শুধুই যেখানে না চাইতে পাওয়া, শুধুই চারিধারে প্রাচুৰ্য্যের, বিলাসের মেলা-যে জীবনে অশ্রুকে জানে না, অপমানকে জানে না, আশাহত ব্যর্থতাকে জানে না, যে জীবনে শেষরাত্রের জ্যোৎস্নায় বহুদিন-হারা মেয়ের মুখ ভাববার সৌভাগ্য নেই, শিশুপুত্র দুধ খেতে চাইলে পিটুলি গোল খাইয়ে প্ৰবঞ্চনা কৰ্ত্তে হয়নি, সে জীবন মরুভূমি। সে সুখসম্পদ ধনসম্পদ ভরা ভয়ানক জীবনকে আমরা যেন ভয় কৰ্ত্তে শিখি । এক এক সময় মনটা এমন একটা স্তরে নেমে আসে যখন জীবনের আসল দিকটা বড় চোখে পড়ে যায়, আজ অনেকদিন পরে একটা সেই ধরণের শুভদিন। কলকাতার শহরে এ দিন আসে না। আজ একটী স্মরণীয় দিন, এই হিসাবে যে আমার বইখানার আজ শেষ ফৰ্ম্মাট ছাপা হোল। আজ মাসখানেক ধরে বইখানা নিয়ে যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেচি, কত ভাবনা, কত রাত-জাগা, সংশোধনের ও পরিবর্তনের ও প্রািফ দেখার যে ব্যগ্র আগ্রহ, সবারই আজ পরিসমাপ্তি। এইমাত্ৰ প্ৰবাসী আপিসে বসে শেষ প্যারাটার প্রাফ দেখে দিয়ে এলুম। ঠিক দুমাস লাগলো ছাপতে। ঘনবর্ষার দিনটী আজ। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। দূরে চেয়ে কত কথা মনে । পড়ে। কিন্তু সে সব কথা এখানে আর তুলবো না। শুধুই মনে কয় সেই ভাগলপুরে নিমগাছের দিকের ঘরটাতে বসে বনাতমোড়া সেই টেবিলটাতে সেই সব লেখা-সেই কাৰ্ত্তিক, সাবের ষ্টেশনে গাছের তলায় শীতকালে পাতা জালিয়ে আগুন-পোহানো, গঙ্গার ধারের বাড়ীটার ছাদে কত স্তব্ধ, অন্ধকার রজনীর চিন্তাশ্রম, সেই কাশীবনে ঘোড়া ছুটিয়ে যেতে যেতে সে সব ছবি-সবারই আজ পরিসমাপ্তি ঘটুল। উঃ, গত ছ’ মাস কি খাটুনিটাই গিয়েচে ! জীবনে কখনও বোধহয় আমি এ-রকম পরিশ্রম করিনি- কখনও না । ভোর ছ’টা থেকে এক কলমে এক টেবিলে বেল পাচটা পৰ্য্যন্ত কাটিয়েচি, মাধু! ঘুরে উঠেচে তখন একটু ট্রামে হয়তো বেড়াতে বেরিয়েচি, ইডেন গার্ডেনে কেয়াঝোপে বসে ও একদিন বোটানিক্যাল গার্ডেনে লালফুল ফোটা বিলটার ধারে বসে কত সংশোধনের ভাবনাই ভেবেচি। তার ওপর কাল গিয়েচে সকলের চেয়ে খাটুনি। সকাল ছ’টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পৰ্য্যন্ত বইএর শেষ ফৰ্ম্মার প্রািফ ও কাটাকুটি, শেষে রাত্রে পাথুরেঘাটার বাড়ীতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যাওয়া ও তদারক করে
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩
অবয়ব