পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SdR তৃণান্ধুর একটু পরে ফকির বাবু এলেন। অনেকক্ষণ ধরে সাহিত্যিক আলোচনা চলল। আমি বিমান বাবুর জামাতা রবি বাবু অনেকক্ষণ ধরে টলষ্টয় ও রুশীয় সাহিত্যিকদের সম্বন্ধে আলোচনা করলুম। রবি বাবু আমার ‘পথের পাঁচালী’র প্ৰশংসা করছিলেন । বল্লেন, অনেকে বলেচেন, “পথের পাচালী’ শেষ হোলে বিচিত্রা ছেড়ে দেবো। মধ্যে আমি ও করুণা বাবু ঘরের মধ্যে এসে বসে সিগারেট খেলুম ও ফকির বাবুর বিরুদ্ধে আমাদের ঝাল। ঝাড়তে শুরু করলুম। তারপরে এক পশলা বৃষ্টি হোয়ে সেটা একটু কমে গোল-বিমান বাবু ও রবি বাবু চলে গেলেন—আমরাও পূর্ণ বাবুর বাড়ীতে কীৰ্ত্তন শুনতে গেলুম। দক্ষিণ ঘোষ বলে একজন ভদ্রলোক সেখানে বৈষ্ণব ভক্তিশাস্ত্ৰ সম্বন্ধে অনেক কথা বলছিলেন-আমার বেশ লাগলো। খুব জ্যোৎস্নার মধ্যে দিয়ে জোরে মোটর হাকিয়ে অনেক রাত্রে বাংলাতে ফেরা গেল। বেশ লাগছিল। কাল সকালে সম্ভবতঃ গিরিডি হয়ে ঐ পথে মোটর বাসে হাজারীবাগ ও সেখান থেকে রাচী হ’য়ে কলকাতায় ফিরবো। দেখি কি হয়। আকাশ পরিষ্কার না থাকলে কোথাও যাবে না । অমর বাবুর দৌহিত্র:অমিতের কথাগুলি ভারী মিষ্টি। তিন বৎসরের শিশু । বেশ লাগে ওকে । এইমাত্ৰ সন্ধ্যা ছটার দিল্লী এক্সপ্রেসে দেওঘর থেকে ফিরে এলুম। সারা দিনটা কাটুল বেশী। বড় রোদ ছিল। করুণা বাবু সারা পথ কেবল গানের বই বার করেন আর আমাকে এটা ওটা গাইতে বলেন-করুণা বাবু সম্পূর্ণ বেসুরে গাইতে থাকেন। মধুপুরে আমার নেমে উশ্ৰী জলপ্রপাত দেখতে যাবার কথা ছিল, কিন্তু উপেন বাবু নামলেন না বলে আমিও আর নামলুম না। তাতে আমার মন খারাপ ছিল, সেটা দূর করে দেওয়ার জন্যে আমার মুখের সামনে একটা সিগারেটু ধরলেন । তারপরে আবার চললো তার সেই বেসুরে গজল গাওয়া। শিশিরকুমার ঘোষের বড় ছেলেও আমাদের সঙ্গে যাচ্ছিলেন-বেশি লোক। হুগলী ব্রিজ থেকে সবাই বুকে পড়ে দেখতে লাগলো-আমার মনে হোল সেই এক ফাত্তন দিনে চুচুড়ায় সখের থিয়েটার ও গোলাপ ফুলের কথা। সেই দুপুরের ঝমােঝম রোদে ফাস্তুনের অলস অবশ হাওয়ায় এই ষ্টেশনের সে প্ল্যাট্রফৰ্ম্মে পায়চারীর কথা কি কখনো ভুলবো ।