পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণান্ধুর SV) মধ্যে আবার খুব বৃষ্টি এল। কলকাতায় কিন্তু বৃষ্টি একটু একটু মাত্র। উপেন বাবু বল্লেন আমার অনুচরগণ হেরে গিয়েচে । এইমাত্র মেসের বারান্দাতে নির্জনে জ্যোৎস্নার আলোতে বসে আছি। বেশ লাগচে । মন মুক্ত, কারণ সম্মুখে প্রচুর অবসর এরই মধ্যে দেওঘর যেন দূর হয়ে পড়েচে । আজই সকালে উঠে যে সুৰ্য্যোদয়ের পূর্বে আমি দেওঘরের পথে পথে বেড়িয়ে বেড়িয়েছি, তা কি স্বপ্ন ? আজই তো ভোরে পশ্চিম আকাশে ধূসর ডিগরিয়া পাহাড়ের রহস্য-ভরা মূৰ্ত্তি ও ত্ৰিকুটের পিছনের আকাশের অরুনািচ্ছটারক্ত সৌন্দৰ্য্য দেখোঁচি, তা যেন মনের সঙ্গে ঠিক খাপ খাচ্ছে না। করুণাবাবুকে বড় ভাল লাগলো। কি শান্ত, সরল হাস্যপ্রিয়, সরস স্বভাবের যুবক !, -গান গলায় নেই। তবু অনবরত গান গাইতে গাইতে জোরে চেঁচাতে চেঁচাতে এলেন—সকলে মুচকি হাসচে-গোপনে চোখ ইসারা করচে পরস্পরে, তার দৃকপাতও নেই। তিনি তা বুঝতেও পারচেন না। আপন মনে গান গেয়েই চলেচেন আর আমাকে ডেকে ডেকে বলচেন-আসুন বিভূতি বাবু এইটে ধরা যাক আসুন—আমার সুরও তার গলার বেসুরাতে । খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তার দৃকপাতও নেই, সুর বেসুর সম্বন্ধে জ্ঞানও নেই। শিশুর মত সরল ভদ্রলোক । 'Men such as these are the salt of the Earth.” পরশু থেকে কি বিশ্ৰী বাদলা যে চলচে! কাল গেল কোজাগরী পূৰ্ণিমার লক্ষ্মীপূজার দিনটা-কিন্তু সারাদিন কি ভয়ানক বর্ষা আর নিরানন্দের মধ্যে দিয়েই কাটুলো ! আজিও সকাল থেকে শুরু হয়েচে-কাল সারারাতের মধ্যে তো এক দণ্ড বিরাম ছিল না বৃষ্টির । কাৰ্ত্তিক মাসে এরকম বাদলা জীবনে এই প্ৰথম দেখলাম। এসব সময়ের সঙ্গে তো বাদলার association মনে । নেই-তাই অদ্ভুত মনে হয়। অন্ধকার হয়ে এসেছে-টেবিলে বসে কিছু দেখতে পাচ্ছি নে, মনে হচ্চে আলো জ্বালতে হবে। কাল যখন গিরিজা বাবুর সঙ্গে বসে গল্প করছিলুম তখন কেবল ঘণ্টাখানেকের জন্যে একটু ধরেছিল। । রেঙ্গুন যাওয়ার কথা উমেশ বাবু যা লিখে রেখে গিয়েছেন, তা এ বৃষ্টিতে কি করে হয় ? আকাশ পরিষ্কার না থাকলে কোথাও গিয়েও সুখ নেই।