পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণান্ধুর S যখন বকুলতলায় এথম বারোয়ারীর বেহালা বাজানো শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলুম-M সব টাটুকী—তাজা, আনকোরা আনন্দ এখনও কিন্তু যেন ভাবলে কিছু কিছু পাই। যে দিন সেই প্রথম বেহালা বেজেছিল, যে দিনটা বাবার সঙ্গে নৈহাটী হয়ে সিঙ্গাড়ার আলু খেয়ে কেওটা থেকে বাড়ী আছিলুম—যেদিন চড়ক তৈরী কল্পৰ্ম-ঠাকুরমাদের বেলতলায় আমি নিজে ; ঠাকুরমাদের পোড়ো ঘরে পাঠশালা-করা, কড়ি খেলায় আমোদ, পূবমুখে যাওয়া, মরগাঙে মাছ ধৰ্ত্তে যাওয়া-শনিবারে ছুটীতে বাড়ী আসার আনন্দকত লিখবো। কে জীবনের এ সব মহনীয় অবদান পরম্পরার কথা লিখতে পারে ? আর মনে হয়। আমি ছাড়া এসবের আসল মানে আর কেই বা বুঝবে ? তা তো সম্ভব নয়-অন্য সকলের কাছে এগুলো নিতান্ত মামুলী কথা বলে মনে হবে। এদের পিছনে যে অদৃশ্য রসভাণ্ডার লুকানো আছে আমি ছাড়া আর কে তা জানবে ?-- অনেকদিন পরে দেশে এসে বেশ আনন্দে দিন কাটুচে । রোজ সকালে উঠে ইছামতীর ধারের মাঠটাতে বেড়াতে যাই, ঝাড় ঝাড় সোদালী ফুল ফুটে থাকে, এত পাখী ডাকে ! , চোখ গেল, বৌ-কথা-ক’, কোকিল কত কি । • • • বেড়িয়ে এসে ওপাড়ার ঘাটে স্নান কৰ্ত্তে নামি । ওপারের চরের শিমুল গাছটার মাথায় তরুণ সুৰ্য্য ওঠে, দুপারে কত শ্যামল গাছপালা । সোদালী ফুলের ঝাড় মাঝে মাঝে দুলতে দেখলেই আমার মনে কেমন অপূর্ব আনন্দ ভরে ওঠে ! • • • প্ৰভাতে পাখীরা যে কত সুরে ডাকে, জলের মধ্যে মাছের ঝাক খেলা করে।--জীবনের প্রাচুৰ্য্যে, সরসতায়, স্বষ্টির মহিমায় অভিভূত হয়ে যাই । কতদূরের সব জীবনধারার কথা, জগতের কথা মনে হয়-আবার স্নান কৰ্ত্তে কৰ্ত্তে চেয়ে দেখি নদীর ধারে গোছা গোছা ঘাস হেলাগোছা ভাবে জলের মধ্যে মাথা দোলাচ্চে, একটা হয়তো খেজুর গাছ গাজিতলার বঁাকে অন্য সব গাছপালায় থেকে মাথা উঠিয়ে দাড়িয়ে আছে। অপুর্ব, সুন্দর, হে স্রষ্ঠা, হে মহিমময়, নমস্কার, নমস্কার । অন্য সব জগৎও যে দেখতে ইচ্ছে যায়, দেখিও । রোজ বৈকালে কালবৈশাখীর ঝড় ওঠে, মেঘ হয়, রোজ, রোজ। ঠিক তিনটা বেলা বাজাতে না বাজতে মেঘ উঠবে, ঝড়ও উঠবে। আর সমস্ত আমি বাগানের তলাগুলো ধাবমান, কৌতুকপর, চীৎকাররত বালক-বালিকাতে