পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণান্ধুর SRGt আজ প্ৰায় বাইশ বছর পরে ভাণ্ডারকোলায় নিমন্ত্রণ খেতে গিয়েছিলুম। কিন্তু কাল সন্ধ্যার কিছু পূর্বে বেলেডাঙার মাঠে যে অদ্ভুত মনের রূপ ও প্ৰকৃতির রূপ দেখেছিলাম, আমন কখনো দেখিনি। কঁচিকাটার স্কুল থেকে ফিরবার পথে মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে বুড়োর পত্রটা পকেট থেকে পড়চিপ্ৰমীলা মারা গিয়েচে লিখচে । সামনে অপূর্ব রংএর আকাশটা ঘন হীরাকসের সমুদ্রের মত গাঢ় ময়ুরকষ্ঠ রংএর পিছনে বর্ণ-সমুদ্র, কোথাও জনমানব নেই-গাছে গাছে পাখীর ডাক, দূরে গ্রামসীমায় পাপিয়া সুর উঠিয়েচে,—জীবনের অপূৰ্ব্বতা কি চমৎকার ভাবেই সন্ধ্যার ছায়াচ্ছন্ন আকাশটার দিকে চেয়ে মনে হোল ! • • • কাল বৈকালের দিকে বেলেডাঙার বট-আশ্বাখের পথটা বেয়ে বেড়াবো বলে, কুঠার মাঠের পথটা দিয়ে চললুম সেদিকে—মাঠে পড়েই অবাক হয়ে পশ্চিম আকাশে চেয়ে রইলুম—মুগ্ধ, আত্মহারা হয়ে গেলুম। সারা বেলেডাঙার বনশ্রেণীর ওপর ঘন কালো কাল বৈশাখীর ঝোড়ো মেঘ জমেচেঅনেকটা আকাশ জুড়ে অৰ্দ্ধচন্দ্ৰাকার মেঘাচ্ছটা-আর তার ছায়ায় চারি ধারের বঁাশবন, ঘন সবুজ শিমূল ও বটগাছগুলা, নীচের আউশের ক্ষেত, বঁাওড়—সবটা জড়িয়ে সে এক অপরূপ মুত্তি ধরেচে। বিশেষ করে ছবি দেখতে হয়েচে মারাত্মক রকমের সুন্দর এক শিমূল ডালের-তার সোজা মগডিালটা মেঘের ছায়ায় ও উড়নশীল ঘন কালো-মেঘে ঢালা আকাশের পটভূমিতে কোন দেবশিল্পীর আঁকা মহনীয় ছবির মত অপূর্ব। সেইটি দেখে চােখ আর আমার ফেরে না-কেমন যেন পা আটুকে গেল মাটীর সঙ্গে, অবশ হয়ে গেলুম, মুগ্ধ হয়ে গেলুম, দিশাহারা হয়ে পড়লুম-ওঃ !—সে দৃশ্যটার অদ্ভুত সৌন্দৰ্য্যের কথা মনে এলে এখনও সারা গা কেমন করে ওঠে। তারপরই সা সা রবে ওপারের দিক থেকে বিরাট ঝড় উঠলো-দৌড়, দৌড়, দৌড়,-হঁপাতে হাপাতে যখন গুরোমনী আমতলাটায় পৌছিয়েচিআমাদের গ্রামের কোলে-তখন বৃষ্টি পড়তে শুরু করেচে-জেলি আর প্রিয় জেলের ছেলে আম কুড়চ্চে—একটী দরিদ্র যুবককে আগ্রহ সহকারে আমি কুড়তে দেখে চোখে জল এল। কি দিয়েচে জীবন এদের ? অথচ এরা মহৎ, এদের দারিদ্র্যে এরা মহৎ হয়েচে । অতিরিক্ত ভোগে ও সাচ্ছল্যে জীবনের সরল ও বন্ধুর পথটাকে হারায় নি।