পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२७ डूशून স্নান সেরে এসে বকুলতলার ছায়ায় বসে ওপরের কথাগুলো লিখলাম । মাথার ওপর কেমন পাখীরা ডাকচে-ফিঙে, দোয়েল, চোখ-গেল-আর একটা কি পাখী—পিড়িং পিড়িং করে ডাকছে, কত কি অস্ফুট কল-কাকলীকি ভালই লাগে। এদের বুলি!-- আজ বৈকালে হাট থেকে এসে কুঠার মাঠে গিয়ে অনেকক্ষণ বস্লুম। শিমূল গাছের এত অপরূপ শোভা তা ত’ জানতাম না। ঝোপের মাথায় মাথায় কি নতুন কচি লতা সাপের মত খাড়া হয়ে আছে। মন পরিপূর্ণ হয়ে গেল সৌন্দৰ্য্যের ভারে-চারিধারে চেয়ে-এই প্ৰকৃতির সঙ্গে, পাখীর গানের সঙ্গে মানুষের সুখ দুঃখের যোগ আছে বলেই এত ভাল লাগে। গ্রামের প্ৰান্তের সন্ধ্যাছায়াচ্ছন্ন-বেণুবনশীর্ষের দিকে চেয়ে মনে হোল ওদের সঙ্গে কত দিনের কত স্মৃতি যে জড়িত-সেই বর্ষার রাতে দিদির কথা, মায়ের কত দুঃখ, আদুরী ডাইনীর ব্যর্থতা, পিসিমা, ইন্দির ঠাকরুণের,-কত সমুদ্রে যাওয়ার স্মৃতি—সেই পিটুলিগোলা-পানকারী দরিদ্র বালকের, পল্লীবালা জোয়ানের, কতকাল আগের সে সব ইংরাজ বালক বালিকার, গাং চিল পাখীর ডিম সংগ্ৰহ কৰ্ত্তে গিয়ে যারা বিপন্ন হয়েছিল- Cape Wanএর ওদিকে গিয়ে যারা আর ফেরেনি-কত কি, কত কি । নদীজলও আজ লাগল। অদ্ভূত-শান্ত সন্ধ্যা-কেউ নেই। ঘাটে, ওপারের গাছপালায় ধূসর সন্ধ্যা নেমেচে—একটী নক্ষত্র উঠেচে মাথার ওপর-কোন অনন্ত দেশের বাণীর মত এই শত দৈন্যসংকীর্ণতাময় সংসারের উৰ্দ্ধে জল জল করে জলচে । এখানকার বৈকালগুলো কি অপূর্ব ! এত জায়গায় তো বেড়িয়েচি, ইসমাইলপুর, ভাগলপুর, আজমাবাদ-কিন্তু এখানকার মত বৈকাল আমি কোথায়ও দেখেচি বলে মনে হয় না-বিশেষ করে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসের মেঘহীন বৈকালগুলি-যেদিন সুৰ্য্য অস্ত যাবার পথে মেঘাবৃত না হয়, শেষ রাঙা আলোকটুকু পৰ্য্যন্ত বড় গাছের মগডালে হালকা সিঁদুরের পোচের মত দেখা যায়—সেদিনের বৈকাল। গাছের ও বাশবনের ঘন ছায়ায় চাপ-আলো, ডাসা খেজুর ও বিম্বপুষ্পের অপূর্ব সুরভি মাখানো, নানা ধরণের পাখী-ডাক, মিষ্ট সে বৈকালগুলিতে এমন সব অদ্ভুত ভাব মনে এনে দেয়, দু একটা পাখী। ধাপে ধাপে সুর উঠিয়ে কোথায় নিয়ে তোলে-কি উদাস, করুণ হয়ে ওঠে