V) o তৃণান্ধুর জনকতক লোক পারের অপেক্ষায় বসে-ডানধারের আকাশটায় অপূর্ব হীরাকসের রং ধরেচে-গাঢ়, নীল । আবার দু’পাড় নির্জন, এক এক স্থানে নৌকা তীরের অত্যন্ত নিকট দিয়ে যাচ্চে যে কেলে কেঁাড়ায় ফুলের গন্ধ পাওয়া যায়। বেলা আরও পড়ে এল, চারিদিকে শোভা অপরূপ, লিখে তা প্ৰকাশ করা যাবে না, ডাইনে ঘন সবুজ ঘাসের মাঠ, বামে আবার উচু পাড়, আবার বাবলা গাছ, শিমূল গাছ, ষাড়া গাছ, পাখীর দল শেষ-বেলায় ঝোপে ঝোপে কলরব করচে-দূরে গ্রামের মাথায় মেঘন্ত পটা পেছনে পড়েচে—এক এক স্থানে নদী জল ঘোর কালো, নিথর কলার পাখীর মত পড়ে আছে-দেখাচ্চে যেন গহন, গভীর, অতলস্পর্শ। বাকিটা ঘুরেই অনেকখানি আকাশ এক সঙ্গে দেখা যাচ্চে, পশ্চিম আকাশের কোলে যেন আগুন লেগেচে, অনেকখানি দূৱ পৰ্য্যন্ত মেঘে, আকাশে, গাছের মাথায় মাথায় যেন সে আগুনের আভা, খাব রাপোতার ঘাটের পাশে কোন দরিদ্র কৃষক বধু জলের ধারের কঁাচড়াদাম শাক কেঁচড় ভরে তুলচে আর মাঝে মাঝে সলজভাবে আমাদের নৌকার দিকে চাইচে । আরও খানিক দূর গেলাম, আবার সেই নিৰ্জনতা, কোথাও লোক নেই, জন নেই, ঘর বাড়ী নেই, শুধু মাথার ওপর সন্ধ্যার ধূসর ছায়াচ্ছন্ন আকাশ আর নীচে সেই মাঠ ও গাছপালা দুধারে। বুড়ো ছকু মাঝি ছেলে সঙ্গে নিয়ে দুখানা ডিঙি দোয়াড়ি বোঝাই দিয়ে চুণী নদীতে মাছ ধৰ্ত্তে যাচ্চে, তিন দিনে সেখানে নাকি পৌঁছুবে বলে। একদিকে ঘন সবুজ কঁচা কষাড়ের বন, নীচু পাড়, জলের খানিকটা পৰ্যন্ত দাম-ঘাসে বোঝাই, কলমী শাক অজস্ৰ, আর কলমীর দামে জলপিপি ও পানকৌড়ী বসে আছে। মাথার ওপরকার আকাশটা বেয়ে সবাইপুরের মাঠটার দিক থেকে খুব বড় এক ঝাক শামকুট পাখী বাসায় ফিরুচে, বোধ হয় জটেমারির বিল থেকে ফিরলো, পাচপোতার বঁাওড়ে যাবে। সেইখানটাতে আবার নিলে মাঝি কাস্তে হাতে-ঘাস কাটুতে নামলো-কি অপরূপ শোভা, সামনে খাব রাপোতার ঘাটুটা-একটা শিমূল গাছের পিছনের আকাশে পাটুকিলে রংএর মেঘদ্বীপ, চারি ধারে এক অপূৰ্ব শ্যামলতা, কি শ্ৰী, কি শান্তি, কি স্নিগ্ধতা, কি অপূৰ্ব আনন্দেই মন ভরিয়ে তোলে-নলে কাস্তে হাতে ঘাস কাটুচে-কঁচা কষাড়ের মিষ্ট, সরস, জোলো গন্ধ বার হচ্চে, আমি শুধু হেলান দিয়ে বসে দূরের আকাশটা ও গাছপালার দিকে চেয়ে আছি।
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬
অবয়ব