WS তৃণান্ধুর গ্রামের কত দুঃখ দারিদ্র্য, কত বেদনা, কত আনন্দ, কত আশা, কত ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে। সে মানুষ হয়ে উঠে এদের গান গেয়ে গেল—এই গাছপালা, লতা, পাখী, ফুলফল, সূৰ্য্য—এদের,—এরাই তাকে কবি করেছিল। বৈকালে হাট’ থেকে এসে বইখানা নিয়ে নিজের ভিটেতে গিয়ে খানিকটা পড়ে এলুম—তারপর গেলুম জটাখালির পুলটাতে। ঝিাবুঝিরে বাতাসে শরীর জুড়িয়ে গেল। তারপর এক বড় অদ্ভূত অভিজ্ঞতা হোল, এমন এক অপূৰ্ব আনন্দে মন ভরে উঠল, সারা গা এমন শিউরে উঠল—সে পুলকের, সে উল্লাসের তুলনা হয় না-গত কয়েক মাসের কেন, সারা বৎসরের মধ্যে ও রকম আনন্দ পাইনি। আজ চলে যাবে। তাই বিদায় নিলুম-বিদায় জ্যাঠামশায়ের পোড়ো ভিটে, বিদায় আমার গ্রাম, বিদায় ইছামতী, আবার তোমাদের সঙ্গে কবে দেখা হবে জানি না, আর দেখা হবে। কিনা তাও জানি না, কিন্তু তোমার ফলে জলে পুষ্ট হয়েচি, তোমার অপরূপ সৌন্দৰ্য্য এমন স্বপ্ন অঞ্জন মাখিয়ে দিয়েছিল দশ বৎসরের বালকের চোখে, তোমার গাছপালার ছায়াতলে, তোমার পাখীর কল-কাকলীতে জীবন-নাট্যের অঙ্ক শুরু, বিদায়, বিদায়যেখানে থাকি তোমাদের কথা কি কখনো ভুলবো ? -- মনে হয় যুগে যুগে এই জন্মমৃত্যুচক্ৰ কোনো এক বড় দেব-শিল্পীর হাতে আবৰ্ত্তিত হচ্চে, হয়তো দু'হাজার বছর আগে জন্মেছিলাম ঈজিপ্টে, যেখানে নলখাগড়ার বনে, শ্যামল নীল নদের রৌদ্রদীপ্ত তটে কোন দরিদ্র ঘরের মা, বোন, বাপ, ভাই, বন্ধুবান্ধবদের দলে এক অপূর্ব শৈশব কেটেচে তারপর এতকাল পরে আবার যাটটা বছরের জন্যে এসেচি এখানে-আবার অন্য মা, অন্য বাপ, অন্য ভাই বোন, অন্য বন্ধুজন। পাচ হাজার বছর পরে witt: (sfei: 5( Ti(33 Brict p as Cycle of Birth and Death যিনি নিয়ন্ত্রিত করচেন। আমি তাকে কল্পনা করে নিয়েচি-তিনি এক বড় শিল্পী-এই সকল জন্মের সুখ দুঃখ, আশা আকাজক্ষা হয়তো কোনো দূর জীবনের উন্নততর, বৃহত্তর, বিস্তৃততর অবস্থায় সব মনে পড়বে।-সে। এক মহনীয়, বিপুল, অতি করুণ অভিজ্ঞতা। কে জানে যে আবার পৃথিবীতেই জন্মাবো, ওই যে নক্ষত্রটা বটগাছের সারির মাথায় সবে উঠেচে-ওর চারি পাশে একটা অদৃশ্য গ্ৰহ হয়তো
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮
অবয়ব