তৃণান্ধুর V)(. খুজিতে খুজতে গেলুম। সে জায়গাটা এখন একটা পোড়ো ভিটে ও জঙ্গল—কোণের সে জামরুল গাছটা এখনও আছে। সন্ধ্যার অন্ধকারে জামরুল গাছটা চেনা যাচ্ছিল না-মোহিত বাবু কাছে গিয়ে বল্লেন-হঁ্যা এটা জামরুল গাছই বটে। জামরুল পেকে আছে। তারপর রাখাল চক্ৰবৰ্ত্তীর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলুম। পুলিন, তার ছেলে। ছেলেবেলায় আমরা এক সঙ্গে বিপিন মাষ্টারের পাঠশালায় পড়েচি-এখন ও হটুপা লম্বা, কালো গোপদাড়িওয়ালা মানুষ। ওর সঙ্গে কথা বলুম প্ৰায় ত্রিশ বছর পরে । শেষ কবে ওর সঙ্গে কথা বলেছিলাম কে জানে ? • • • বাখাল চক্ৰবৰ্ত্তীর বাড়ীর ভিতরের রোয়াক দিয়ে ওদের রান্নাঘরের রোয়াকে বসে মাসীমার সঙ্গে কথা বলুম । শেষ কবে কথা বলেছিলাম, কবে ওদের রোয়াকে পা দিয়েছিলাম, হয়তো তখন আমরা কেওটাতে ছিলাম --তারপর হয়তো শীতলের মায়ের গল্পবলা, কি আতুরীর কাছে ধামা কুলো বেচার ঘটনাটা-যা আমার কেওটা সম্পর্কে মনে আছে, ঘটেছিল। তারপরে এক বিরাট আনন্দ, আলাপ, রহস্য, উল্লাস, দুঃখ, হৰ্ষ, শোক, আলোকপূর্ণ-বিরাট জীবন কেটেছে-পটুপটি তলার মেলায়, বকুলতলার দিনগুলাতে, পূব-মুখে যাওয়ায়, ইছামতীর ধারের সে অপূর্ব শৈশবের আনন্দ-ময় দিনগুলিসেই কতদিন স্কুল থেকে সপ্তাহ পরে ফিরে এসে মায়ের হাতে চৈত্র মাসের দিনে বেলের পান খাওয়া তারপর স্কুল কলেজ, বাইরের জীবনে যা কিছু ঘটেচে সবই ওর পরে । কালকার দিনটীতে আবার এতকাল পরে পা দিলাম রাখাল চক্ৰবৰ্ত্তীর বাড়ীর ভিতরকার রোয়াকে বা পুলিনের সঙ্গে কথা কইলাম । জীবনের অপূৰ্ব্বত্ব এই সব মুহুর্তে কি অদ্ভুত, অপরূপ ভাবেই ধরা পডে যায় । করুণা মামার বাবা যোগীনবাবু জানালা খুলে কথা কইলেন। তিনি আমাকে খুব চেনেন দেখলাম । বাত আটটার বাসে হুগলীঘাট এলাম। খুব পরিষ্কার আকাশ, খুব নক্ষত্র উঠেচে। রাত এগারোটায় কলকাতা ফেরা গেল। সেই সকাল ছ’টায় বেরিয়ে কোথায় বড় জাগুলে, মরিচ, দুধারের ঘন জঙ্গল, কঁচরাপাড়া বাজার, বাঁশের পুল, হালিসহরের খেয়া ঘাট, কেওট, হুগলী ঘাট, নৈহাটী-সব বেড়িয়ে ঘুরে আবার কলকাতা ফিরলাম সাড়ে
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪১
অবয়ব