তৃণান্ধুর VOS আনন্দে মানুষকে এত উচ্চেও ওঠাতে পারে। অমৃত বলে মনে হচ্ছিল নিজেকে, সত্য বলে মনে হচ্চিল, বিরাট ও শাশ্বত বলে মনে হচ্ছিল, - এক উন্মাদনাময়ী প্ৰাণশক্তির অভিব্যক্তি !- মুগ্ধ হয়ে গেলাম দু একটা চরণ গান তৈরী করে গুনগুন করে গাইলাম :- মনে আমার রঙ ধরেচে। আবার সুরের আসা-যাওয়া,- আজি ক'দিন থেকেই এরকমটা হচে । দিনগুলো যে ভয়ানক নিরানন্দ হয়ে উঠেচে একথার কোনো ভুল নেই। এ শুধু হয়েচে সকাল থেকে রাত দশটা পৰ্য্যন্ত ভয়ানক খাটুনির জন্যে। অনবরত পরের খাটুনি, নিজের জন্য এতটুকু ভাববার অবকাশ নেই, অবসর নেই, সকাল দশটা থেকে আরম্ভ করে রাত দশটা পৰ্য্যন্ত বারো ঘণ্টা । মনের অবকাশ মানুষের জীবনের যে কত দরকারী জিনিষ তা এই কৰ্ম্মব্যস্ত, যন্ত্রযুগের অত্যন্ত কৰ্ম্মঠ, হিসাবী ও সময়জ্ঞানসম্পন্ন মানুষেরা কিছু বুঝবে কি ? এতে মানুষকে টাকা রোজগার করায়, ভাল খাওয়ায়, ভাল পর্যায়, ভাল গাড়ী ঘোড়া চড়ায়অর্থাৎ ব্যক্তিত্বকে আরও জাগিয়ে নাচিয়ে তোলে-শক্তি করে বঁচিয়ে রাখে, বেশ সুষ্ঠুভাবে ও কৃতীর সুনামে বঁচিয়ে রাখে-কিন্তু ভারবাহী চোখে-ঠলি বলদের থেকে কোনো পার্থক্যের গণ্ডী টেনে দেয় না-জীবনকে মরুভূমি করে রেখে দেয়,-টাকার গাছের আবাদ । প্ৰকৃতির শ্যামল বন্য সম্ভার, নীল আকাশ, পাখীর কৃজন, নদীর কল মৰ্ম্মর, অস্ত-দিগন্তের সান্ধ্যমায়া-এ সব থেকে বহুদূরে, এক জনহীন, জলহীন বৃক্ষলতাহীন মরু। এদের দেশ ভ্ৰমণেও যেতে দেখোঁচি ফাস্ট ক্লাস কামরায় চেপে, দশদিনের ভ্ৰমণে দুই হাজার টাকা ব্যয় করে, মোটরে করে যাবতীয় স্থান এক নিঃশ্বাসে বেড়িয়ে, বিলাতী হোটেলে খানা খেয়ে, হুইস্কি টেনে-সেও ঐ ভেড়ার দলের ভেড়ার মত বেড়ানো। আজ বসে বসে শুধু মনে হচ্ছিল অনেকদিন আগে বাল্যের নবীন মধুর বর্ষায় বৈকালগুলি-কি ছায়া পড়তে, কি পত্রপুষ্পের সুগন্ধ বেরুতো-কি পাখীর গান হোত-জীবনের সম্পদ হোল সে সব-এক মুহুৰ্ত্তে জীবনকে বাড়িয়ে তোলে, বৃদ্ধিশীল করে-আত্মার পুষ্টি ওখানে । ধ্যান অর্থাৎ contemplation চাই, আনন্দের অবকাশ চাই-তবে হোলো আত্মার পুষ্টি-টাকা রোজগারের ব্যস্ততায় দিনরাত কাটিয়ে দেওয়ায় নয় । মানুষের জীবনে প্ৰকৃতি একটি মহাসম্পদ, এর সঙ্গে অসহযোগ কর্লে
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫
অবয়ব