পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণান্ধুর 8○ একখানা হাতের লেখা মাসিক পত্ৰ বার করচে, তাতে লেখা দিতে বলচে। কাল সে আসবে বেলা তিনটের সময়। সেখান থেকে পার্ক সার্কাসের ট্রামে ফিরছিলুম-বৈকাল ছ’টা। পূবদিকের আকাশ অন্ধকার হয়ে আসচে । শিয়ালদহের কাছটায় ট্রামটা এলেই আজকাল পূব দিকে চাই । অন্যদিনও চাই-এমন হয় না-আজ যে কী অপূর্ব মনে হোল। --মাকাল ফল, পিসিমা, পুরাণে বঙ্গবাসী, দুপুরের রৌদ্র, মাকাল গাছ, ঘুঘু পাখী, বাঁশবন —কত কথা যে এক মূহুর্তে মনে এল। আমি এরকম আনন্দ একদিন মাত্র পেয়েছিলাম,-সেদিনটা স্কুলের ছাদ থেকে বহুদূরের আকাশটার দিকে চেয়েছিলাম। এই সন্ধ্যা ছ’টার সময়ে । তার পরে সুরি লেনের কাছে নেমে গোলাম রাজকৃষ্ণদের বাডী যাব বলে ! আমি শুধু প্রার্থনা করি আমাকে আগে নিয়ে চল হে ভগবান, যাতে সর্বদা মন গতিশীল থাকে। কিসে মন বদ্ধিত হয়, আনন্দ বদ্ধিত হয়, তার সন্ধান তোমার জানা আছে, আমাদের নেই। — তা ছাড়া আমার শিল্পী মন কি করে। আরও পরিপুষ্ট হবে তার সন্ধান তুমিই জানো। তোমার যে দিকে ইচ্ছা সে দিকেই নিয়ে যেও । অবশেষে ঘুরিয়া যাওয়াই ঠিক করে কালকার বম্বে মেলে বার হয়ে পড়া গেল। দিনটা খুব ছিল ভাল-বৈকালের দিকে ট্রেনটা ছাড়ল-বর্ষাশেষে বাংলার এ অংশটায় শ্যামল-শ্ৰী দেখে বুঝতে পারলাম বাংলা বাংলা করি বটে, কিন্তু দেশের সমগ্র পরিপূর্ণতাকে কখনো উপভোগ করিনি-কী অপূর্ব অস্ত আকাশের রঙীন মেঘস্তুপ, কী অপরূপ সন্ধ্যার শ্যামছায়া।-- কোলাঘাটের যে এমন রূপ, তা এর আগে কে ভেবেছিল ?-পিছন থেকে চেয়ে চেয়ে দেখলাম, দেশের ভিটা সেদিন দেখে এসেচি, তারই কথা মনে হোলসেই বি করে গাছগুলো সন্ধ্যার ছায়ায় বাল্যের আনন্দ-ভরা এক অপরাহ্রের ছায়াপাতে মধুর হয়ে উঠেচে এতক্ষণ—এই তো পূজার সময়, বাবা এতদিন বাড়ী এসেছেন, আমাদের পূজার কাপড় কেনা হয়ে গিয়েচে এতদিনকোজাগরী পূর্ণিমার রাত্রির উৎসবের সে সব আনন্দ-কি জানি কেন এই সব সময়েই তা বেশী করে মনে আসে । সব সময় এই দেশের ভিটার ছবিটাই মনে উৎসাহ, আনন্দ ও প্রেরণা দেয়-এ অতি অদ্ভুত ইতিহাস।