পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(łR তৃণান্ধুর ভেবে মুগ্ধ হই, তা এখনও অটুটু, অক্ষুন্ন রয়েচে—আরও পরিপূর্ণভাবে দেশে বিদেশে তার গতি নিত্য নবতর পথে । আকাশের দিকে চাইলাম-মাথার উপর ধূসর আকাশে একটি নক্ষত্ৰ মিটু মিটু করচে। সঙ্গে সঙ্গে কালকার থিয়েটারে শোনা গানটা গাইলাম, জনতার মাঝে জনগন পতি, বক্ষের মাঝে দৃপ্ত মন” । দেবব্রতের মত ক্ষুদ্র ও সুদৰ্শন এক দেবশিশুর ছবি মনে উঠল, ঐ ছবি বিশ্বের অজানা,-অচেনা পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে সে বালক তার অপূর্ব শৈশব যাপন করচে আনন্দে, সহাস্য কলরবে, দায়িত্বহীন কৌতুকের উচ্ছাসে। তারপরে তার জীবনের সে সব বহুবর্ষব্যাপী বিরাট কৰ্ম্মযজ্ঞ, সে গভীর বেদনাপূর্ণ ট্রাজেডি-কত যুগব্যাপী দুঃখ সুখের শুরু-পৃথিবীর মানুষেরা যা কোনো দিন ধারণাই কৰ্ত্তে পারে না। উঃ সে কি অদ্ভুত অনুভূতিই হোল যখন এ ছবি আমার মনে উঠল। আজ বুঝলাম। এই অনুভূতিই আসল জীবন। আমি নিরানন্দ দিনগুলিতে দেখোঁচি মন কিছুতেই আনন্দ পেতে চায় না-টেনে টুনে কত করে, কত নক্ষত্র জগৎ, এ, ও নানা ব্যাপারের মধ্যে দিয়ে জোর করে আনন্দ আনতে হয়, তা যাও বা একটু আধটুকু আনে—তাতেই তখন মনে হয়, না জানি কত বড় অনুভূতিই বুঝি বা হোল। কিন্তু আসল ও সত্যিকার আনন্দের মুহুর্তে বোঝা যায় সে অনুভূতি ছিল অগভীর, মেকি, টেনে-বুনে-আনা। আসল আনন্দকে জোর করে, মনকে বুঝিয়ে, তর্ক করে আনতে হয় না তা আজ বুঝেচি-সে 1897-asis spontaneous. আর ও অনুভূতি যার জীবনে না হয়েচে-অর্থের মানের, যশের প্রাচুৰ্য্যে তার দীনতা ঘোচাতে পারে না । “অপরাজিত’ উপন্যাসের বন-ভ্ৰমণ লিখচি আজি । কাল স্কুল কমিটির মিটিং-এ ওরা সুবোধবাবুকে নোটস দিলে-আমি আগে জানলে হোতে দিতাম না—আমায় আগে ওরা জানায়ও-নি,--যদিও সাহেবের কোনো দোষ ছিল না, সাহেব আমাকে জানাবার কথা বলেছিল সুরেশ বাবুকে । শেষকালে চেষ্টা করেও কিছু করা গেল না-বেচারীকে যেতেই হোল। এই বেকার-সমস্যার দিনে একজন Young manএর চাকুরী এভাবে নেওয়া বড় খারাপ কাজ, মনে বড় কষ্ট হোল-সুবোধবাবু মুখাটী চুণ করে বসলো কাল রাত্রে, কি করি আমার তো আর কোনো হাতই নেই!