তৃণান্ধুর q\9 এবার বাড়ী গিয়ে বড় গোলমাল। কদিন বেশ কেটেছিল, শ্যামাচরণ দাদার স্ত্রীর স্নেহ বড় উপভোগ করেচি-বৌদি বড় ভাল মেয়ে-আমার শ্রদ্ধা হয়েচে । বর্ষা-বাদলার দিনে পুটীদিদিদের বাড়ী গরু বাছুরের সঙ্গে একঘরে বাস করে মনটা খিচে উঠেছিল। ওখানে এবার তুফান ঠাকরুণ মারা গেলেন। আসবার আগের দিন তার শ্ৰাদ্ধ হল। রোজ বিকেলে বকুলতলায় বস্তুম। জগা ছড়া বলতে “অশন বসন রণে সদা মানি পরাজয়, দুনিয়নে বারিধারা গঙ্গা যমুনা বয়কথায় কথায় তুমি যেতে বল যমালয়,”-ইত্যাদি ছেলেমানুষের মুখে বেশ লাগতো । কিছুদিন কলিকাতা গিয়ে রইলাম। একদিন নীহার রায়ের ওখানে গেলাম, সেখানে তার অনেক বন্ধুবান্ধব বসে আছে, “অপরাজিত’ সম্বন্ধে অনেক কথাবাৰ্ত্তা হোল। নীহার বল্লে-'অপরাজিত’ একটা Great Book, আমি এদের সেই কথাই বলছিলাম, আপনি আসবার আগে। ধূর্জন্টীবাবুর বাড়ীতে একদিন “অপরাজিত’ নিয়ে আলোচনা হোল আমার সঙ্গে। ভদ্রলোক অনেক জায়গা দাগ দিয়ে পড়েচেন, মাৰ্জিনে নোটু লিখে। তারপর নীরদের বাড়ীতে চা-পার্টি উপলক্ষে সুনীতিবাবু ও রঙীন হালদারের সঙ্গে সে সম্বন্ধে অনেক কথা হোল । রবিবারে গেছলাম, আবার পরের রবিবারে ফিরি। সেদিন রাণাঘাটে নেমে কি ভয়ানক বর্ষা। গোপালনগরে নামালাম অবিশ্রান্ত বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে। অতি কষ্টে গাড়ী যোগাড় করে ফিরলাম। হাটবার, সুশীলবাবু একটা মোট পাঠিয়েছিলেন শ্যামাচরণ দাদাদের জন্যে-সেটা তাদের দিলাম। কাল খুব গুমটি হয়েছিল। বৈকালে জেলি, সরল এরা পড়তে এলবকুলতলায় চেয়ার পেতে বসে খুকুর সঙ্গে খুব গল্প কলুম। রিমঝিম বর্ষার মধ্যে মেঘভরা আকাশের তলা দিয়ে কুঠার মাঠে বেড়াতে গেলাম। ওপারে বৰ্ষশ্ৰোত বয়, গাছপালা, সবুজ তৃণভূমি-বৃষ্টিতে চারিধার ধোয়া-ধোয়াতারপর গেলাম ওপাড়ার ঘাটে । জল গরম-নেমে সুন্নান কৰ্ত্তে কৰ্ত্তে চারিদিকে চেয়ে সে কি আনন্দ পেলাম--মাথার উপর উড়ন্ত সজল মেঘরাশি, জলের রং কাকের চোখের মত, কি সুন্দর কদম গাছটার রূপ-মনে হোল ভাগলপুরের সেই অপূর্ব সবুজ কাশীবনের চর-সুদূরপ্রসারী প্ৰান্তরের সে
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৯
অবয়ব