তৃণান্ধুর সৌন্দৰ্য্য বড় আপেক্ষিক বস্তু। একে সকলে চিনতে পারে না, ধরতে পারে না। কানকে, চােখকে, মনকে তৈরী করতে হয়, সঙ্গীতের কানের মত সৌন্দর্ঘ্যের জ্ঞান বলে একটা জিনিসের অস্তিত্ব আছে। শিমুলগাছের মাথাটার উপরকার আকাশটার দিকে চেয়ে দেখে নিয়ে বামে নতিডাঙ্গার দিকে চোখ ফিরিয়ে নিতেই রক্তমেঘস্তপ যেন যুগান্তের পর্বত শিখরের মত আকাশের নীল স্বপ্নপটে-তার ওপারে যেন জীবন পারের বেলাভূমি আনন্দ আবছায়ার মত সন্ধ্যার ধূসর অন্ধকার একটু একটু চোখে পড়ে। রোজ আমাদের বাড়ীর পাশের বঁাশতলার পথটা দিয়ে যেতে যেতে বাল্যের শত ঘটনা, কল্পনার আশা, দুঃখ সুখের স্মৃতি মনে জেগে উঠত-এই সব বনের প্রতি গাছপালায়, পথের প্রতি ধূলিকণায় যে পঁচিশ বৎসর আগের এক গ্রাম্য বালকের সহস্ৰ সুখদুঃখ জড়ানো আছে, কেউ তা জানবে না। আর এক শত বৎসর পরে তার ইতিহাস কোথায় লেখা থাকবে ? কোথায় লেখা থাকবে এক মুগ্ধমতি"আট বৎসরের বালক জীবনে প্ৰথম গ্রামের উত্তরমাঠে তার জেঠামশায়ের সঙ্গে বেড়িয়ে এসে কি আনন্দ পেয়েছিল ? কোথায় লেখা থাকবে তার মায়ের-হাতে-ভাজা তালের পিঠে খাওয়ার সে আনন্দের কাহিনী ? সেদিন সন্ধ্যার সময় আমাদের ঘাটে স্নান কৰ্ত্তে নেমে নতুন-ওঠা চতুর্থীর চাঁদের দিকে চােখ রেখে ভাবতে ভাবতে এইসব কথা বেশী করে মনে জাগছিল। গোপাল নগরের বারোয়ারীর যাত্রা দেখতে গিয়ে তাই সে ছেলেটার কথা মনে পড়লো যে আজ পচিশ বছর আগে কৃষ্ণঘোষের তামাকের দোকানের বারান্দাতে বসে তার বাবার সঙ্গে যাত্ৰা দেখতে দেখতে দময়ন্তীর দুঃখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কঁাদতো। সেসব কথা যাক। অদ্ভুত এই জীবন, অপূর্ব এই সৃষ্টির আনন্দ । নির্জনে বসে ভেবে দেখো, মানুষ হয়ে উঠবে। অনেককাল পরে গরীবপুরে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে মিনু ও তার বোন রাণীর সঙ্গে দেখা হোল । আজ প্ৰায় ষোল বছর আগে ওদের বাসাতে বাড়ীর ছেলের মত থাকতুম। তখন আমিও বালক, ওরা নিতান্ত শিশু । সেই মিনুকে যেন আর চিনতে পারা যায় না। এতবড় হয়ে উঠেচে, এত দেখতে সুন্দর হয়েচে । রাণীও তাই । কতক্ষণ তারা আমাকে কাছে বসিয়ে পুৱানো দিনের গল্প কৰ্ত্তে লাগলো আপনার বোনেদের মত, ছাড়তে আর কিছুতে চায় না। শেষকালে রাণী তার শ্বশুর বাড়ীর ঠিকানা ”گہ بہ
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮
অবয়ব