পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণান্ধুর 2ܘ খেলে ভারী আনন্দ পাই।।* খুকী কিন্তু পড়াশুনো করে না। এই, ওর দোষ। খুকু এর মত নয়, খুকু খুব বুদ্ধিমতী, পড়াশুনোয় খুব ঝোক । বনৰ্গায়ে সেদিন বোটের পুলে বিশ্বনাথ, দেবেন, সরোজ সবাই বসে গল্প কচ্ছিল, আমি যেতে অনেকক্ষণ বসে গল্প হোল, বিশ্বনাথ নিজের বাসায় নিয়ে গিয়ে খুব খাওয়ালে। রাত্রে এই দিন বন্ধুর বাসায় খাওয়ার পরে জ্যোৎস্নায় বেড়াতে বেড়াতে বনগা স্কুলের ফটকে ঠেস দেওয়ানো বেঞ্চিটর ওপর গিয়ে বসলাম। কত কথা মনে আসে ! চব্বিশ বছর আগে একজন বারো বছরের ক্ষুদ্র বালক এক বাড়ী থেকে ভিত্তি হতে এসে ওই জায়গাটাতে লাজুক ভাবে চুপ করে বসে ছিল—ক’তকাল আগে ! সেদিনে আর আজকার মধ্যে কত তফাৎ তাই ভাবি। হেডমাষ্টার মশায়ের ঘরের সামনে বেড়িয়ে এলাম-বোর্ডিং-এর সব ঘরের সামনে বেড়ালাম। কিন্তু পর পর সেদিনের কথাটা মনে আসছিল--একটী ছোট ছেলে বর্ষায় জলা ও আষাঢ়-শ্রাবণের আউশ ধানের ক্ষেত ভেঙে এক-গা কাদা মেখে চাদর গায়ে, মায়ের কাছ থেকে ভিত্তি হওয়ার সামান্য টাকা ও দুটী পয়সা, জলখাবারের জন্যে বেঁধে এনে লাজুক মুখে চুপ করে ওই স্কুলের পৈঠার উপর বসে আছে—এমন মুখচোরা যে, কাউকে বলতে পাবুচে না ভিত্তি কোন ঘরে হয়, বা কাকে বলতে হবে ? সেই ছোট ছেলেটী চব্বিশ বছর আগেকার আমি-কিন্তু সে এত দূরের ছবি, যে আজ যেন তার ওপর অলক্ষিতে স্নেহ আসে। ওঃ, এবার যেন ছুটীটা খুব দীর্ঘ মনে হচ্চে, সেই কবেকার কথা সুশীল বাবুর স্ত্রী বটতলায় ভাত রোধে আমাদের পরিবেশন করে খাইয়েছিলেন, আমরা কাঠ কুড়িয়েছিলাম, যুগল এসে দাড়িয়ে কথা কয়েছিল-সে কত দিনের কথা। তার পর গোপালনগরের বারোয়ারী, তুফান ঠাকরুণের বৃষোৎসর্গ শ্ৰাদ্ধ, সে সবও কতকালের কথা। বড় চারার আমি কেনা, মাঠের চারায় আমি কেনা, সে সবও আজকার কথা নয় । আঁাচানোর সময়ে খুড়ীমাদের বাড়ীর পিছনে গাছপালা ও বাশবনের দৃশ্যটা এত অদ্ভুত যেন একেবারে শৈশবে নিয়ে যায় এক মুহূৰ্ত্তে ।

  • খুকু এবং খুকী এক নয়,-খুকু থাকে বারাকপুরে, আর খুকী বনগাঁয়ে