ԳԵ- তৃণান্ধুর থাকি-অন্যমনস্ক হবার চেষ্টা করি।-সে ব্যথা বড় সাংঘাতিক-যাক, ওকথা আর লিখে কি হবে । সেদিন শিবরাত্ৰি গেল । এই শিবরাত্রির সঙ্গে আমি সেদিন বসে বসে হিসেব করে দেখছিলাম যে, জীবনের কত সুখদুঃখের কাহিনীই না জড়িত রয়েচে ! মধ্যে একদিন এসেছিল বনগায়ের হারবিলাস-নৃপেন রায়ের নতুন কাগজের জন্যে, (তার নাম আমি আজই করে এসেছি ‘উদয়ন’;-তাকে বল্লুমতোমাদের বাসাটা আমায় দেবে ? আমি গভীর রাত্রে বসে বসে ভাবছিলাম, তা যদি হয়, ওরা যদি বাসাটা ছেড়ে দেয়।--তা হ’লে সেখানে কি করে বাস করবো ? কত কথাই না মনে পড়বে । মনে পড়বে আমি যখন বালক, কিছুষ্ট বুঝিনে—বনগাঁয় হেডমাষ্টার মশায়ের বেতের বিভীষিকায় দিনরাত কঁাটা হয়ে থাকি -সেই সব দিনের কথা । সেই এক শিবরাত্ৰি-কিন্তু না তার আগেও শিবরাত্রির কথা আমার মনের মধ্যে জাগ্ৰত আছে । ছেলেবেলায় হ্যালিসহর থেকে সেই যে এসেছিলাম-ছোট মামা প্ৰভাতী গান কৰ্ত্ত বৈষ্ণবদের সুরে-আমি শীতে কঁাপিতে কঁাপিতে নদী থেকে নেয়ে আসতুম— জীবনের সেই প্ৰথম শিবরাত্রি যার কথা মনে আছে। তারপর অবিশ্যি বনগায়ের ঐ শিবরাত্ৰি।। ওঁরা এসে বাইরের ঘর থেকে আমায় ডেকে নিয়ে গেলেন মন্ত্র পড়াতে-বেশ মনে আছে । তাই ভেবেছিলাম। এতকাল পরেজীবনের এত অদ্ভুত পরিবর্তনের পরে আবার হারবিলাসদের বাসায় থাকবে। কেমন করে ? ছোট খুকী সম্প্রতি মারা গেছে। ও কেন এসেছিল তাই জানি না। আট মাস বেঁচেছিল-কিন্তু এত দুঃখ পেয়ে গেল। এই অল্পদিনের মধ্যে তা আর কাকে বলি ? ও আপন মনে হাসাতো-কিন্তু সবাই বলতে “আহা কি হাসেন, আর হাসতে হবে না, কে তোমার হাসি দেখাচে ?”-ওর অপরাধ-ও জন্মাবার পর ওর বাবা মারা গেল। সত্যিই ওর হাসি কেউ চাইত না । ওর বাবা তো মারা গেল ; ওর মারও সঙ্কটাপন্ন অসুখ হোল-ওকে কেউ দেখতে না-ওর খুড়ীমা বল্লে-টাকা পাই তো ওকে মাইয়ের দুধ দি । ওকে নারকোল তলায় চট পেতে শুইয়ে রাখতে উঠানে-আমার কষ্ট হোতী-কিন্তু আমি কি করবো ? আমি তো আর স্তন্যদুগ্ধ দিতে পারিনে ? ওর রিকেট্স। হােল। দিন দিন শীর্ণ হয়ে গেল-তবুও মাঝে মাঝে বনগায়ের বাসায়
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৪
অবয়ব