পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

birR তৃণান্ধুর বেলা পড়ে গিয়েচে । বিস্বাধর অনেকদূর পর্য্যন্ত আমার গাড়ীর সঙ্গে সঙ্গে এল । পথের পাশের আমতলায় সেই নাচের দল রোধে খাচে । সেই দাড়িওয়াল বৃদ্ধটা ভাত খাচ্চে শালপাতায়। পাশে অদ্ভুত গড়নের কঁাসার বাটীতে কি তারকারী । গ্রাম পার হলুম। দুধারে শালবন, মাঠ, চারিধারে শিলাখণ্ড ছড়ানো। রোদ-পোড়া মাটীর সুগন্ধ ভাগলপুরের কথা মনে করিয়ে দেয়। ভাগলপুর নয়-ইসমাইলপুরের জঙ্গলের কথা। মুক্ত অরণ্যাণী চারিধারে-নিঃশ্বাস চাপা বন নয়-উচ্চাবাচ প্ৰান্তর ও শালবন, দুধারেই উচু পাহাড়-গিরিসানু অরণ্যে আবৃত। একটু পরেই *,সাঁ উঠল-নবমীর জ্যোৎস্না। শালবনের রূপ বদলে গেল—পাহাড়দেশী রহস্যময় হয়ে উঠল-কি সুন্দর হাওয়া ! কি মাটীর সুগন্ধ ! এনেকদিন কলকাতা শহরে আবদ্ধ থাকার পরে এই শালবনের হাওয়া ও বিরাট Space-এর Senseটা যেন আমায় নবজীবন দান করেচে। সুবিধে ছিল ওরা সবাই অনেক আগে চলে গিয়েচে-আমার গাড়ীতে আমি একা। তাই বসে নিরিবিলি ভাববার যথেষ্ট সময় পেয়েছিলাম-ওরা সঙ্গে থাকলে কেবল বক বািক গল্প হোত । চাদের জ্যোৎস্না আরও উজ্জলতার হোল । কি নির্জন চারিদিক । বাম দিকের পাহাড়শ্রেণীর মাথায় সেই দুটো নক্ষত্র উঠেচে—যা আমি পার্ক সার্কাসে যাবার সময় রোজ সন্ধ্যাবেলা দেখি। চোখ বুজে কল্পনা করবার চেষ্টা কলুমি কোথায় পার্কসার্কাস, আর কোথায় এই মহিমময় মুক্ত আরণ্যভূমি, পাহাড়শ্রেণী, প্ৰান্তর, বঁাশবন, ঝর্ণা-উড়িষ্যার এই সৌন্দৰ্য্যময় প্রত্যন্তদেশ - আমি অবাক হয়ে গেলাম, মুগ্ধ হয়ে গেলাম-ঘণ্টা দুষ্ট চলাবার পর আমি যেন একেবারে এই অপার্থিব জ্যোৎসার জগতে, এই অজানা অঞ্চলের ততোধিক অজানা পাহাড় ও অরণ্যাণীর মায়ায় আত্মহারা হয়ে ডুবে গেলামএত কথাও মনে আসে এই সব জায়গায় । আমি ভেবে দেখলাম মন এ সব স্থানে এলে অন্য রকম হয়ে যায়। কলকাতায় এ সব চিন্তা মনে আসে না-এখানে এই দু-ঘণ্টার নির্জন ভ্ৰমণে যা মনে এল। জীবনে এমন একটা দিন আসবে, যখন আমাকে এই রকম নির্জন স্থানে এক বাস কৰ্ত্তেই হবে, নৈলে আমার মনের গোপন গভীরতম দেশে কি সব কথা আছে আমি নিজেই বুঝতে পারবে না। ভারতবর্ষের রূপটাও যেন নতুন করে বুঝতে পারলাম। ভেবে