তৃণান্ধুর brs) ধানের ক্ষেত ও জলাভূমি-মাঝে মাঝে ছোট ছোট শালবন । রাঙামাটিও সব জায়গায় নেই। বেলপাহাড়ের মত পাহাড় ও জঙ্গল এ পথে কোথাও নেই-এক ডোঙ্গারগড় ছাড়া। ডোঙ্গারগড় ছাড়িয়ে তিন চারটা ষ্টেশন পৰ্য্যন্ত দৃশ্য ঠিক আমি যা চাই তাই। উভয় পাশে ঘন অরণ্য, শাল, খয়ের ও বন্যবঁাশ, মাঝে মাঝে পাহাড়ী নদী, পর্বতমালা । উড়িষ্যার বনের চেয়েও এ বন অধিকতর গভীর কিন্তু এইটুকু যা, তারপর আবার সেই একঘেয়ে সমতলভূমিনাগপুৱা পৰ্য্যন্ত । বাংলাদেশে এত অনন্তপ্রসারী দিক চক্রবালদেশের কল্পনাও করতে পারা যায় না । এই সব স্থান জ্যোৎস্নারাত্রে ও অল্পরাত্রে যে অদ্ভুত দেখতে হবে তা বুঝতে পারলাম-তবু মনে হোল বনভূমির বৈচিত্র্য ও সৌন্দৰ্য্য যা বাংলাদেশে আছে, তা এ সব অঞ্চলে নেই । বাংলার সে কমনীয় আপন ভোলানো রূপ এদের কৈ ? এখানকার যা রূপ তা বড় বেশী রুক্ষ্ম। অবশ্য ডোঙ্গারগড় ষ্টেশন ছাড়িয়েই যে পাহাড় পড়ে—এমন অনাবৃত শিলাস্তােপ, অতি গম্ভীরদর্শন উন্নতভূমি বাংলার কোথাও নেই একথা ঠিক-কিন্তু বাংলায় যা আছে, এখানকার লোকে তা কল্পনাও করতে পারবে না । বৈকালে নাগপুরে কোতোয়াল সাহেবের বাংলোয় এসে উঠলাম। তারপর চা খেয়ে আমি ও প্ৰমোদ বাবু বেড়াতে বেরুলাম। শহরের উত্তর পশ্চিম প্ৰান্তে একটা বড় পাহাড় আছে, শালবনে আবৃত, নীচে দিয়ে মোটরের পথ আছে। দুজনে সেখানে একটা শিলাখণ্ডের ওপর গিয়ে বসলাম। হাওয়া কি সুন্দর । দুজন ভদ্রলোক পথে বেড়াচ্ছিলেন, তাদের চেহারা দেখে আমার মারহাটী সেনানায়ক ভাস্কর পণ্ডিতের কথা মনে পড়লো। সন্ধ্যাতারা উঠেচে। পাহাড়ের বনভূমি অন্ধকার হয়ে এল। দূরে বনের মাথার দিকে চেয়ে দেখলাম-ওদিকে সাতশো মাইল প্ৰান্তর, অরণ্য, নদী পার হয়ে তবে বারাকপুর। হাটবার, আজ রবিবার, সন্ধ্যা হয়েচে, কঁাচিকাটার পুল দিয়ে গনেশ মুচি হাট করে ফিরচে আর বলতে বলতে যাচ্চে-হাটে বেগুন আজি খুব সস্তা। - এত জায়গা থাকতে ও জায়গার কথা আমার এত মনে হয় কেন ? আর মনে পড়ে আমাদের পোড়ো ভিটের পশ্চিম ধারের সেই কি অজানা গাছগুলো, যার সঙ্গে বাল্য থেকে আমার কত পরিচয়-ওগুলোর কথা মনে কল্পনা করলেই আবার আমার বারো বছরের মুগ্ধ শৈশব যেন ফিরে আসে।
পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৫
অবয়ব