পাতা:তৃণাঙ্কুর - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S) o তৃণান্ধুর কাল বৈকালে এখানকার মহারাজ বাগ ও মিউজিয়াম দেখলাম। মিউজিয়মে অনেক পুরাণো শিলাখণ্ড আছে-কয়েকটি খৃষ্টীয় তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীর। বিলাসপুর জেলায় একটা ডাকাতের কাছে পাওয়া কতকগুলো তীর দেখলাম, ভারী কৌতুহলপ্ৰদ জিনিস বটে। একটী জীবন্ত অজগর সাপ দেখা গেল। মহারাজবাগে একটা বড় সিংহ আছে, কিন্তু সে সব যতই ভাল লাগুক, সে সব নিয়ে আজ লিখবো না। আজ যা নিয়ে লিখতে বসেচি, তা হচ্চে আজকার বিকেলের মোটর ভ্ৰমণটী । নাগপুর শহরের চারিধারে যে এমন অদ্ভুত ধরণের প্রাকৃতিক সৌন্দৰ্য্যবিশিষ্ট স্থান আছে, সে সব কথা আমি কখনও জানতুম না। কেউ বলেও নি। শহরের উত্তর দিকে পাহাড়ের ওপরকার রাস্তা দিয়ে আজ আমরা মোটর নিয়ে গিয়েছিলাম। যোধপুরী ছাত্ৰটী আমাদের নিতে এসেছিল। সে যে কি অপূর্ব সৌন্দৰ্য্য, তা লিখে প্ৰকাশ কৰ্ত্তে পারি নে। সন্ধ্যা হয়ে আসচে, অস্তদিগন্ত রঙে রঙে রঙীন। বহুদূরে, দূরে, উচ্চ মালভূমির সুদূর প্ৰান্ত সান্ধ্যছায়াচ্ছন্ন, দিকচক্রবালরেখা নীল শৈলমালায় সীমাবদ্ধ, সামনে, পিছনে, ডাইনে, বায়ে যেদিকে চাই, ধুধু বৃক্ষহীন, অন্তহীন উচ্চাবচ মালভূমি, শৈলমালা, শিলাখণ্ড,-দু’চারটা শালপলাশের গাছ। মাথার উপর অপূর্ব নীল আকাশ, ঈষৎ ছায়া ভরা কারণ সন্ধ্যা হয়ে আসচে-পিছনের পাহাড়টী ক্ৰমে গাড়ীর বেগে খুব দূরে গিয়ে পড়ছে, তার ওপরকার বৃক্ষশ্রেণী ক্রমশঃ অস্পষ্ট হয়ে আসচে-সামনের শৈলমাল ফুটে উঠছে-ক্রমে অনেক দূরে মিতাবলাডির পাহাড় ও বেতার টেলিগ্রাফের মাস্তুল দেখা যাচ্ছে। তার নীচে চারিদিকের মালভূমি ও পাহাড়ে ঘেরা একটা খাজের মধ্যে নাগপুর শহরটাি। এমন একটা মহিমময় দৃশ্যের কল্পনা আমি জীবনে কোনোদিনই কৰ্ত্তে পারি নি—বাংলাদেশ এর কাছে লাগে না-এর সৌন্দৰ্য্য যে ধরণের অনুভূতি ও পুলক মনে জাগায়, বাংলাদেশের মত ভূমিসংস্থান যে সব দেশে, সে সব দেশের অধিবাসীদের পক্ষে তা মনে কল্পনা করাও শক্ত । উড়িষ্যার দৃশ্যও এর কাছে ছোট বলে মনে হয়—সেখানে জঙ্গল আছে, বুনো বাশের ঝাড় আছে বটে। কিন্তু এ ধরণের অবর্ণনীয় সুমহান, বিরাট, রুক্ষ্ম সৌন্দৰ্য্য সেখানকারও নয়। তখন আমি এসব দেখিনি কাজেই উড়িষ্যাকেই ভেবেছিলাম। এই প্ৰাকৃতিক সৌন্দৰ্য্যের চরমতম সৃষ্টি । আমি বনশ্ৰী খুব ভালবাসি, বন না থাকলে আমার চোখে সে সৌন্দৰ্য্য সৌন্দৰ্য্যই নয়—কিন্তু বন না