বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ত্রিপুরার স্মৃতি.djvu/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

'

“ওঁসম্বৎ ৩ মাঘ দিনে ২১ শ্রীমহীপালদেব রাজ্যে
কীর্ত্তিরিয়ং নারায়ণ ভট্টারকাখ্য সমতটে বিলকীন্ন
কীয় পরম বৈষ্ণবস্য বণিক লোকদত্তস্য বসুদত্ত সুত
স্য মাতা পিত্রোরাত্মনশ্চ পুণ্যযশোভিবৃদ্ধয়ে”

 উক্ত শিলালিপি হইতে অবগত হওয়া যায় যে, নৃপতি মহীপালের রাজত্বের তৃতীয় বর্ষে সমতট দেশের অন্তর্গত “বিলকীন্ন” নিবাসী লোকদত্ত নামক জনৈক বৈষ্ণধর্ম্মাবলম্বী বণিককর্ত্তৃক মূর্ত্তিটী প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। ত্রিপুরার পশ্চিম দক্ষিণাংশ যে একদা নৃপতি মহীপালের অধিকারভুক্ত ছিল, ইহা উল্লিখিত শিলালিপি হইতে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়।

 বাঘাউরা গ্রামের উত্তরদিকে ন্যূনাতিরেক ৬ মাইল দূরস্থ বর্ত্তমান “বিলকেন্দু-আই” গ্রামটীই শিলালিপিতে উৎকীর্ণ “বিলকীন্ন” বলিয়া অনুমিত হয়। এই স্থান হইতে উল্লিখিত বিষ্ণু-মূর্ত্তি কি প্রকারে বাঘাউরায় অপসারিত হইয়াছে তাহা অবগত হওয়া যায় না।

 প্রাগুক্ত গ্রামের পার্শ্ববর্ত্তী অপরাপর কতিপয় গ্রাম মধ্যে পুষ্করিণী প্রভূতি খনন করিবার কালে প্রায়শঃ ধাতু ও প্রস্তর নির্ম্মিত নানাবিধ মূর্ত্তি এবং ইষ্টক নির্ম্মিত ভবনাদির বিধ্বস্ত অংশ প্রাপ্ত হওয়া যায়। ইহাতে সম্ভাবিত হয়—অত্রস্থ গ্রামনিচয় এক কালে কোন সমৃদ্ধিশালী জনপদের অন্তর্ভূত ছিল।

 ত্রিপুরার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রদেশে যে সমুদয় নৃপাল রাজত্ব করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে কেহ কেহ বৌদ্ধধর্ম্মাবলম্বী ছিলেন বলিযা জ্ঞাত হওয়া যায়। কিন্তু কোন কোন মহীপ যে হিন্দুধর্ম্মাবলম্বী না ছিলেন এমন নহে। কারণ তাঁহাদিগের দ্বারা সংস্থাপিত কতিপয় হিন্দু দেব দেবীর প্রতিমূর্ত্তিও উদ্ধৃত হইয়াছে। অধুনা সেই নৃপতিগণের বংশ এতৎপ্রদেশ হইতে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হইয়াছে। জনশ্রুতি ব্যতিরেকে তাহাদিগের সম্বন্ধে কোন প্রকার প্রকৃত ইতিহাস প্রাপ্ত হওয়া যায় না।

 খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে “সেংথুম্‌ফা” উপাধিধারী সুপ্রসিদ্ধ ত্রিপুরাধিপতি “কীর্ত্তিধর” বাহুবলে মেঘনানদী পর্য্যন্ত রাজ্য বিস্তার করেন। সেই সময়ে তিনি ত্রিপুরার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তবর্ত্তী প্রদেশের তদানীন্তন মহীপকে যুদ্ধে পরাজিত করিয়া তদীয় রাজ্য অধিকার করিয়াছিলেন—এবংবিধ কিংবদন্তী প্রচলিত আছে।

ত্রিপুরার স্মৃতি