পাতা:ত্রিপুরার স্মৃতি.djvu/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

কিন্তু উক্ত বিজিত নৃপাল কোন্‌ বংশ-সম্ভূত এবং তাঁহার নাম-ই বা কি তাহ অবগত হওয়া যায় না।

 যে প্রবল পরাক্রান্ত “সেংথুম্‌ফা” বাহুবলে নানাদেশ বিজয়পূর্ব্বক রাজ্য বিস্তার করিয়া যশস্বী হইয়াছিলেন, কালের কুটিলচক্রে হেন জনের কীর্ত্তিময় চরিত্রেও দুর্ব্বলতা-রূপ পঙ্ক বিলেপিত হইয়া তদীয় অর্জ্জিত যশোরাশি ক্ষুণ্ণ করিয়াছিল— ইহা তাঁহার ভাগ্য-দোষ ব্যতীত আর কি বলা যাইতে পারে।

 উক্ত ঘটনাটি এইস্থানে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হইলেও কৌতুহলী পাঠকের চিত্তবিনোদনের জন্য নিম্নে বিবৃত হইল।

 ত্রিপুরেশ “কীর্ত্তিধর” বা “সেংথুম্‌ফার” রাজত্বকালে ত্রিপুররাজ্য-নিবাসী হীরাবন্ত খাঁ নামক জনৈক ভূম্যধিকারী বঙ্গদেশের তদানীন্তন যবনাধিপতির অধীনে কার্য্য করিত। তদীয় কার্য্যতৎপরতা দৃষ্টে গৌড়েশ্বর তাহাকে বিশেষ অনুগ্রহ প্রদর্শন করিতেন। এই জন্য হীরাবন্ত খাঁ গর্ব্বমদে মত্ত হইয়া সেংথুম্‌ফাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। তদীয় রাজা নিবাসী জনৈক ক্ষুদ্র ভূস্বামীর উদ্ধত আচরণে সেংথুম্‌ফা ক্রোধাম্বিত হইয়া হীরাবন্ত খাঁকে ধৃত করিবার নিমিত্ত সৈন্য প্রেরণ করেন। হীরাবন্ত খাঁ পরম্পরায় এইসংবাদ অবগত হইলে ভীত হইয়া গৌড়াধিপতির শরণাপন্ন হয়।

 তৎকালে যবনেরা মগধ ও বঙ্গদেশ অধিকার করিয়া বিজয়-গর্ব্বে গর্ব্বিত এবং রাজ্য-বিস্তার লালসায় উন্মত্ত হইযাছিল। সেই সময়ে একটী সুপ্রাচীন হিন্দুরাজ্য আয়ত্তে আনয়েন করিবার সুযোগ দৃষ্টে গৌড়াধিপতি যবনরাজ রণসজ্জায় সুসজ্জিত বিরাট বাহিনীসহ ত্রিপুররাজ্য আক্রমণ করেন।

 উত্তমরূপে সুসজ্জিত এবং বহুসংখ্যক যবন সেনার বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হইলে পরাজয় অবশ্যম্ভাবী বিবেচনায় সেংথুম্‌ফা গৌড়াধিপতির সহিত সন্ধি স্থাপন করিতে উদ্যত হন। এই সংবাদ “ত্রিপুরাসুন্দরী” নাম্নী সেংথুম্‌ফার মহিষীর কর্ণগোচর হইলে তিনি স্বামীকে কহেন—রাজ্য রক্ষা করা যখন তোমার সাধ্যাতীত, তখন আমি-ই আজ জন্মভূমির গৌরবরক্ষার্থ যবনগণের সহিত যুদ্ধ করিব। মাতৃভূমিরক্ষার জন্য যুদ্ধ করিয়া সমর প্রাঙ্গণে জীবন বিসর্জ্জন করিলে আমার স্বর্গলাভ হইবে।

 ত্রিপুরেশগণের জীবন চরিত “রাজমালা” নামক বঙ্গভাষায় লিখিত গ্রন্থে এই বিষয়ের নিম্নলিপিত রূপ উল্লেখ আছে।

ত্রিপুরার স্মৃতি