প্রাক্কালে তৎকর্ত্তৃক যুদ্ধক্ষেত্রে তৃণবৎ বিমর্দ্দিত হইয়া অবশিষ্ট যবনসেনা নতশিরে গৌড়াভিমুখে প্রত্যাবর্ত্তন করে।
এইরূপে স্বনামধন্যা বীরাঙ্গনা “ত্রিপুরাসুন্দরী দেবী” নাম্নী ত্রিপুরাধিপতি কীর্ত্তিধর বা সেংথুমফাব মহিষী যবনগণকে সমবপ্রাঙ্গণে বিধ্বস্ত করিয়া জয়মাল্য ধারণ পূর্ব্বক ত্রিপুররাজ্যেব মুখ উজ্জ্বল কবেন।
সংস্কৃত ভাষায় লিখিত রাজমালা বা রাজরত্নাকর গ্রন্থ এবং শ্রীহট্টের ইতিহাস প্রভৃতি অপর কতিপয় পুস্তক অবলম্বন পূর্ব্বক হীরাবন্তখাঁর বিষয় লিখিত হইয়াছে। তৎসম্বন্ধে বাঙ্গলা রাজমালায় যেরূপ লিপিবদ্ধ আছে, তাঁহার সহিত এই স্থানে বর্ণিত হীরাবন্তখাঁর বিষয়ের কিঞ্চিৎ পার্থক্য পরিলিক্ষিত হইবে; কিন্তু মূলতঃ বিষয় একই।
মেজর চার্লস ষ্টুআর্ট কর্ত্তৃক বিরচিত বঙ্গদেশের সুপ্রসিদ্ধ ইতিহাসে এইরূপ উল্লেখ আছে—১২৪৩ খৃষ্টাব্দে জাজিনগরের (ত্রিপুরা) অধিপতির সহিত গৌড়ের শাসনকর্ত্তা তুগান খাঁর কোন বিষয়ে মনোমালিন্য সংঘটিত হওয়াতে তৎকর্ত্তৃক উক্ত প্রদেশ আক্রান্ত হয়। কিন্তু তিনি সেই প্রদেশস্থ নৃপালের দ্বারা যুদ্ধে পরাজিত হইয়া গৌড়ে প্রত্যাবর্ত্তন করেন।
“জাজিনগর” কোন স্থানে অবস্থিত ছিল এবং উহা কোন্ প্রদেশ ইহা নির্দ্ধারণ করা এক জটিল সমস্যার বিষয। উক্ত মেজব ষ্টুআর্ট কর্ত্তৃক লিখিত বাঙ্গালার ইতিহাসের দুই এক স্থানে “জাজিনগর”, “ত্রিপুরা” বলিযা উল্লেখ থাকিলেও উহা ত্রিপুরা অথবা উড়িষ্যার অন্তর্গত বর্ত্তমান “জাজপুর”—এই বিষয়ে তিনি স্থির সিদ্ধান্তে উপস্থিত হইতে সক্ষম হন নাই। তবে তাঁহার বিরচিত ইতিহাস হইতে ইহাও জ্ঞাত হওয়া যায় যে, জাজিনগর ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব্বদিকে অবস্থিত। তাহা হইলে উক্ত জনপদ কোন মতেই উড়িষ্যার অন্তর্ভূত হইতে পাবে না।
ত্রিপুরা জিলার অন্তর্গত “নুরনগর” পরগণাব মধ্যে অধুনা “কস্বা” নামে খ্যাত জনপদেব সান্নিধ্যে “জাজিসাব” নামক যে গ্রাম আছে, সুপ্রাচীনকালে তাহাই “জাজিনগর” নামে প্রসিদ্ধ একটী সমৃদ্ধশালী নগরী হওয়া অতি সম্ভব। এই অঞ্চল অধুনা ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার সঙ্গমস্থলেব সমসূত্রে পূর্ব্ব-দক্ষিণ কোণে ন্যূনাতিরেক ২০ মাইল দূরে অবস্থিত। সম্ভবতঃ সেই সময়ে ব্রহ্মপুত্র নদ