পাতা:ত্রিপুরার স্মৃতি.djvu/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 স্তূপটী খনন করিলে তন্মধ্য হইতে পুরাকালের নির্ম্মিত নিকেতন এবং কৌতুহলপ্রদ প্রাচীন দ্রব্যাদি যে আবিষ্কৃত হইতে পারে এই বিষয়ের কোন সন্দেহ নাই। এমন কি—উৎকীর্ণ লিপিবিশিষ্ট প্রস্তরফলক, তাম্রশাসন কিংবা তৎকাল প্রচলিত মুদ্রাদিও প্রাপ্ত হওয়া বিচিত্র নহে—যদ্দ্বারা এতৎপ্রদেশের অন্ধকারময় ইতিহাস জনসমাজে প্রকাশিত হওয়া অতি সম্ভব।

 এই স্থান নিবাসী অধিকাংশ লোকই যুগী জাতীয়। জ্ঞাত হওয়া যায় যে, তাহারা বহুকাল অবধি এই স্থানে বাস করিতেছে। ঐ সমস্ত যুগী—বৌদ্ধধর্ম্মাবলম্বী চন্দ্ররাজগণের এতৎপ্রদেশ শাসন কালের নিবাসী হইতে পারে। যুগীরা পূর্ব্বে বৌদ্ধধর্ম্মাবলম্বী ছিল—পরিশেষে ক্রমশঃ তাহারা হিন্দুধর্ম্মে দীক্ষিত হইয়াছে বলিয়া অনুমিত হয়।

 যুগীদের মধ্যে হল স্পর্শ করা নিষিদ্ধ বিধায় তাঁহারা ভূমিকৰ্ষণ করে না। বস্ত্র বয়নই তাহাদিগের জীবিকা-নির্ব্বাহের প্রধান উপায়। তজ্জন্য ইহাই তাহাদিগের জাতীয় ব্যবসায়ে পরিণত হইয়াছে।

 ময়নামতী নিবাসী যুগীরা নানাবর্ণের যে সমুদয় সুরম্য বস্ত্র বয়ন করে, তৎসমুদয় পূর্ব্ববঙ্গে সর্ব্বত্র প্রসিদ্ধ। এই স্থানে ও কুমিল্লার হাটে উল্লিখিত বস্ত্রনিচয় সচরাচর বহুল পরিমাণে বিক্রয় হইয়া থাকে।

 নিশ্চিন্তপুর

 ময়নামতীর সন্নিকটস্থ “নিশ্চিন্তপুর” নামক গ্রামের মধ্যবর্ত্তী “লালমাই” পর্ব্বতের ক্রমনিম্ন গাত্রে কতিপয় ইষ্টক-স্তূপ দৃষ্টিগোচর হয়। তৎসমুদয়ের সম্বন্ধে জনশ্রুতি এই—প্রাগুক্ত রাজা মাণিকচন্দ্র ও তদীয় পুত্র গোবিন্দচন্দ্র বা গোপীচাঁদ এতদঞ্চলে রাজত্ব করিবার কালে এই স্থানে রাজধানী স্থাপন পূর্ব্বক যে সকল অট্টালিকাদি নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, উক্ত ইষ্টক-স্তূপ-রাশি তাহারই বিধ্বস্ত অংশ। পূর্ব্বে এই স্থানে ভগ্ন প্রাচীরদি বর্ত্তমান ছিল বলিয়া জ্ঞাত হওয়া যায়। অধুনা তৎসমুদয় আর নাই। ইষ্টক গ্রহণ ও গুপ্ত-ধন অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে পুরাকালে নির্ম্মিত ভবনাদির ভগ্নাবশেষ পল্লিনিবাসিগণ কিংবা অপরাপর লোকে সচরাচর যে প্রকার সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করিয়া থাকে, অত্রস্থ ভগ্ন প্রাচীরাদিও তদুদ্দেশ্যে বিধ্বস্ত হইয়া থাকিবে। দুঃখের বিষয়—সামান্য লোভের বশবর্ত্তী হইয়া লোকে এবম্প্রকারের প্রাচীন কীর্ত্তিমালা বিলুপ্ত করে। উক্ত ইষ্টক-রাশির উর্দ্ধভাগে নিগমানন্দ স্বামীর আশ্রম নির্ম্মিত হইয়াছে।

ত্রিপুরার স্মৃতি
১১