পাতা:ত্রিপুরার স্মৃতি.djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কোণে—“পুরাণ রাজবাড়ী” নামে প্রসিদ্ধ এক প্রাচীন জনপদ আছে। তন্মধ্যে যে সমস্ত বিকীর্ণ ও স্তূপীকৃত ইষ্টকরাশি দৃষ্টি পথে পতিত হয়, সেই সমুদয় জনৈক রাজার নিকেতনাদির বিধ্বস্ত অংশ বলিয়া প্রবাদ প্রচলিত আছে। সম্ভবতঃ এই কারণ বশতঃ উক্তস্থান “পুরাণ রাজবাড়ী” নামে প্রসিদ্ধ লাভ করিয়া থাকিবে।

 অত্রস্থ বিকীর্ণ ইষ্টকরাশি যে নৃপালের ভবনাদির ধ্বংসাবশিষ্ট অংশ বলিয়া কথিত আছে, তাঁহার সম্বন্ধে কোন কথা বলিতে কেহই সক্ষম নহে। কিন্তু এই স্থান জগন্নাথ দীঘী হইতে অধিক দূর না হওয়া বশতঃ এই রূপ সম্ভাবিত হয়—প্রাগুক্ত দীর্ঘিকার খননকারী কুমার জগন্নাথ দেব তদীয় অগ্রজ গোবিন্দ মাণিক্যের ত্রিপুররাজ্য শাসন কালে নিম্নলিপিত কারণ বশতঃ এই স্থানে আগমন পূর্ব্বক বাস করিয়া থাকিবেন।

 তদানীন্তন ধর্ম্মভীরু ত্রিপুরেশ গোবিন্দ মাণিক্য জীব হিংসা করা পাপ বিবেচনায় রাজ্য হইতে পশুবলিপ্রথা রহিত করিতে চেষ্টানন্বিত হন। তাঁহার এবংবিধ চিরপ্রথা উন্মুলিত করিবার প্রয়াস পর্য্যবেক্ষণ করিয়া প্রজাবর্গের অন্তঃকরণে অসন্তোষেব কারণ উৎপন্ন হয়। সেই সুযোগে তদীয় বৈমাত্রেয় ভ্রাতা রাজ্য-লোলুপ “নক্ষত্র দেব” তাহাকে সিংহাসনচ্যুত করিয়া স্বযং রাজ্য অধিকার করিতে উদ্যত হন; এবং তদুদ্দেশ্যে তিনি বদ্ধপরিকর হইয়া “চন্তাই” উপাধিধারী ত্রিপুররাজ্যের সুবিখ্যাত ‘চতুর্দ্দশ দেবতা’র পূজককে স্বীয় পক্ষে আনয়ন পূর্ব্বক ষড়যন্ত্র আরম্ভ করেন। তাহার ফলে রাজ্যমধ্যে ধর্ম্মসংক্রান্ত ও রাষ্ট্রীয়-বিপ্লব-বহ্নি প্রজ্জ্বলিত হইয়া উঠে।

 পরিশেষে নক্ষত্র দেব এক তুমুল সংগ্রামে তদীয় অগ্রজ গোবিন্দ মাণিক্যকে পরাজিত করিয়া ১০৭০ ত্রিপুরাব্দে (১৬৬০ খৃষ্টাব্দে) “ছত্র মাণিক্য” নাম ধারণ পূর্ব্বক সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু তিনি অধিক কাল রাজত্ব করিতে সক্ষম হন নাই।

 জ্ঞাত হওয়া যায় যে, গোবিন্দ মাণিক্য রাজ্যভ্রষ্ট হইয়া চট্টগ্রামের পার্ব্বত্য প্রদেশে গমন পূর্ব্বক তথায় বাস করিয়াছিলেন। তৎপ্রদেশের অন্তবর্ত্তী একটী গিরিশ্রেণীর পাদদেশে প্রবাহিত “কাসলং” নামক নদীর শাখা “মাইনী” নদীর তীরে কতিপয় ফল বৃক্ষ, সরোবর ও ইষ্টক-নির্ম্মিত ভবনাদির ধ্বংসাবশেষ দৃষ্টিপথে পতিত হয়। তৎসমুদয় গোবিন্দ মাণিক্যের পূর্ববর্তী সপ্তদশম ত্রিপুরেশ “রত্নফা”র বাসস্থানের নিদর্শন বলিয়া ত্রিপুরার পর্বতনিবাসিগণ-মধ্যে কিংবদন্তী

২৪
ত্রিপুরার স্মৃতি