পাতা:ত্রিপুরার স্মৃতি.djvu/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



ধর্ম্মসাগর দীর্ঘিকা

 দীৰ্ঘে ৮৩৪ হস্ত এবং প্রস্থে ৫৫৪ হস্ত যে এক সুবিখ্যাত সরোবর কুমিল্লা নগবীতে আছে,—তাহা খৃষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীর ত্রিপুররাজ কুলতিলক ধর্ম্মমাণিক্য-কর্ত্তৃক খনিত। এবং এই কারণ বশতঃ দীর্ঘিকাটী “ধর্ম্মসাগর” নামে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছে।

 উল্লিখিত জলাশয়ের খননকারী কেবল যে শ্রীধর্ম্ম নামে অভিহিত হইযাছিলেন তাহা নহে; তাহার তুল্য ধর্ম্মপরায়ণ ও ন্যায়বান্‌ মহীপতি ত্রিপুররাজ্যে দ্বিতীয় আর কেহই জন্মগ্রহণ করেন নাই। হেন জনের বিষয় উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হইবে না মনে করিয়া, তদীয় জীবনচরিতের সার মর্ম্ম সঙ্ক্ষেপে নিম্নে লিখিত হইল।

 চন্দ্রবংশেব শিরোভূষণ উক্ত ধর্ম্ম মাণিক্য, ত্রিপুরাধিপতি বহুশাস্ত্রজ্ঞ মহা মাণিক্যের জ্যেষ্ঠ তনয়। যৌবন কালেই তিনি এই নশ্বব জগতের মায়া-মোহে বিতৃষ্ণ হইযা রাজ্যবাসনা পরিত্যাগ করেন। এই জন্য তিনি তদীয় পিতৃদেবের জীবদ্দশাতেই সংগোপনে গৃহ ও স্বজন পবিত্যাগ পূর্ব্বক সন্ন্যাসিবেশে তীর্থ পয্যটনে বহির্গত হন।

 নানা তীর্থ পরিভ্রমণান্তে কুমার শ্রীধর্ম্ম দেব বারাণসীতে উপস্থিত হইলে তথায় যে এক অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হইয়াছিল বলিয়া প্রবাদ প্রচলিত আছে, তাহা এই—

 একদা মধ্যাহ্নে পথশ্রান্তিতে কাতর হইয। শ্রীধর্ম্ম দেব বাবাণসীর পথপ্রান্তে ঘোর নিদ্রাবেশে শয়ন করিতেছিলেন; এমন সময় একটা বিষধর ভুজঙ্গ ফণা বিস্তার পূর্ব্বক তদীয় মস্তক আতপতাপ হইতে রক্ষা করিতেছিল। এবংবিধ অভূতপূর্ব্ব ঘটনা জনৈক ব্রাহ্মণ পর্য্যবেক্ষণ করিয়া ভাবিল, ইনি কখনই সামান্য ব্যক্তি হইবেন না। তাহার লক্ষণ দৃষ্টে ইহা স্পষ্টই প্রতীয়মান হইতেছে—এই ব্যক্তি যে কোন এক কালে দেশবিশেষের অধিপতি হইবেন এই বিষয়ের কোন সন্দেহ নাই। এইরূপ অনুধাবনা করিয়া উক্ত ব্রাহ্মণ তাঁহাব জাগরণ কাল পর্য্যন্ত তথায় অপেক্ষা করিতে লাগিল।

২৬
ত্রিপুরার স্মৃতি