পাতা:ত্রিপুরার স্মৃতি.djvu/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শৃঙ্খলা স্থাপন না কবেন, তাহা হইলে সুপ্রাচীন রাজ্যটী চিরকালেব জন্য উচ্ছন্ন যাইবে।

 দূত-মুখে তিনি পৈতৃক রাজ্যের এবংবিধ শোচনীয় দশা অবগত হইলে বাধ্য হইয়া তাঁহাকে ত্রিপুরাতে প্রত্যাবর্ত্তন করিতে হয়। এবং ৮১৭ ত্রিপুরাব্দে তদীয পিতৃদেব-পরিত্যক্ত শূন্য সিংহাসনে আরোহণ করতঃ ন্যায় ও সুশাসনের দ্বারা রাজ্যমধ্যে সুখ ও শান্তি স্থাপন পূর্ব্বক প্রজাপালন করিয়া পরিশেষে ৮৪৮ ত্রিপুরাব্দে বসন্তরোগে মানবলীলা সংববণ কবেন।

 কথিত আছে—এবম্প্রকার একত্রিংশ বর্ষ ব্যাপী তদীয রাজত্বকালে দুর্ভিক্ষ, মহামারই প্রভৃতি কোনরূপ মাবাত্মক ব্যাধি কিংবা রাষ্ট্রবিপ্লব বা অশান্তি রাজ্যমধ্যে সঙ্ঘটিত হয নাই। এই জন্য তৎকালে জনসাধারণ-কর্ত্তৃক কথিত হইত ধর্ম্মময় ত্রিপুরাধিপতি ধর্ম্ম মাণিক্যের পুণ্যবলে তদীয় রাজ্য মধ্যে এবংবিধ সুখ শান্তি বিবাজ করিয়াছিল।

 তিনি যে কেবল ধার্ম্মিক ছিলেন এমন নহে, শৌর্য্যে বীর্য্যে অদ্বিতীয় এবং ন্যায়বান সুশাসক বলিযাও প্রসিদ্ধি লাভ কবিযাছিলেন। এতদ্ব্যতীত তিনি একজন গুণগ্রাহী পুরুষও ছিলেন। গুণবান ব্যক্তি সর্ব্বদা তৎকর্ত্তৃক আদৃত হইত। জাতি ও ধর্ম্মের কোনরূপ বৈলক্ষণ্য হইত না। কালে খাঁ ও গগন খাঁ নামক আরাকান নিবাসী যবনদ্বয়ের কার্য্য দক্ষতা ও নানাবিধ সদ্গুণ পর্য্যবেক্ষণ করিয়া তিনি তাহাদিগকে ত্রিপুরোরাজ্যে মন্ত্রী নিযুক্ত কবিয়াছিলেন। ইহাই সর্ব্ব প্রথম ম্লেচ্ছ জাতীয় দুই ব্যক্তি উক্ত রাজ্যে এবংবিধ উচ্চ ও গৌরবান্বিত রাজকর্ম্মচারী পদে নিযুক্ত হইয়াছিল। ইহার পূর্ব্বে আর কখনও এইরূপ হইযাছে বলিয়া অবগত হওযা যায় না।

 নৃপতি ধর্ম্ম মাণিক্য ন্যায়দণ্ড-ধারণপূর্বক রাজ্যশাসন করিবার কালেই তদীয়পিতৃপুরুষগণের কীর্ত্তি কাহিনী শ্রবণকরিতে অভিলাষ জ্ঞাপন করিলে “দুৰ্লভেন্দ্র নামক চন্তাই” উপাধিধারী চতুর্দ্দশ দেবতাব সর্ব্ব প্রধান পূজক কর্ত্তৃক তৎপূর্ব্ববর্ত্তী ত্রিপুরেশগণের ইতিবৃত্ত আদ্যন্ত বিবৃত হয়। সেই সমস্ত কথা তৎকালের রাজসভা পণ্ডিত শুক্রেশ্বরবাণেশ্বর নামক দুই ব্রাহ্মণ গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করেন।

 যে প্রথিতনামা পুণ্যশ্লোক ত্রিপুরেশ ধর্ম্ম মাণিক্যের জীবন চরিত সংক্ষেপে বর্ণিত হইল, তৎকর্ত্তৃকই কুমিল্লা নগরিস্থ ধর্ম্মসাগর নামক সুপ্রসিদ্ধ দীর্ঘিকাটী খনিত হইয়াছিল। ১৩৮৭ শকাব্দীর (১৪৫৮ খৃষ্টাব্দ) বৈশাখ মাসে সোমবার শুক্লা

২৮
ত্রিপুরার স্মৃতি