পাতা:ত্রিপুরার স্মৃতি.djvu/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হস্ত দীর্ঘ ও দুই হস্তের কিঞ্চিদধিক প্রস্থ একটী প্রকাণ্ড প্রস্তরমূর্ত্তি ভূপতিত রহিয়াছে। লোকে ইহাকে নারায়ণ মূর্ত্তি কহে। কিন্তু অধোমুখে নিপতিত থাকা বশতঃ প্রকৃতপক্ষে উহা কি মূর্ত্তি তাহা নির্ণয় করিতে সক্ষম হওয়া যায় না। বিশিষ্ট কারুকৌশলবিহীন বর্ণিত মূর্ত্তিত্রয় পর্য্যবেক্ষণ করিয়া অনুমিত হয় যে, কোন সুদক্ষ ভাস্কর শিল্পিক-কর্ত্তৃক মূর্ত্তি-নিচয় নির্ম্মিত হয় নাই।

 প্রাগুক্ত “ঠাকুরাণী-বাড়ী” নামক এই জনপদে প্রসিদ্ধ স্তূপের উত্তরদিকে অবস্থিত তদপেক্ষা ক্ষুদ্রাকারের আর একটী মৃত্তিকা-স্তূপোপরি বহু সস্থ্যক বিকীর্ণ ও পুঞ্জীভূত ইষ্টক-রাশি দৃষ্টিপথে পতিত হয়। জনশ্রুতি এই—তৎসমুদয় জনৈক নৃপাল-কর্ত্তৃক নির্ম্মিত নিকেতনাদির ধ্বংসাবশেষ এবং সেই কারণে এই স্থান “পুরাণ রাজবাড়ী” নামে অভিহিত হইয়া থাকে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে বলিভীম নারায়ণ এই জনপদে আগমন করিয়া যে সমুদয় ভবনাদি নির্ম্মাণ পূর্ব্বক বাস করিয়াছিলেন উল্লিখিত ইষ্টকরাশি তাহারই বিধ্বস্ত অংশ হওয়া সম্ভব।

 বলিভীম নারায়ণের নামসমন্বিত “বলিনারায়ণ দীঘী” নামে প্রসিদ্ধ যে সরোবরের বিষয় পূর্ব্বে উল্লেখ করা হইয়াছে, তাহার পূর্ব্ব-দক্ষিণ কোণে একদল বহু প্রস্তর মূর্ত্তি ছিল বলিয়া অবগত হওয়া যায়। প্রবাদ এই—কালক্রমে তৎসমুদয় ভূগর্ভে নিহিত হইয়াছে।

 এই জনপদে অবস্থিত মূর্ত্তি-নিচয়ের স্থাপন কর্ত্তার নাম এবং স্থাপন সময়ের সম্বন্ধে কোন তথ্যই নির্ণয় করা যায় না। ত্রিপুরবাজ্যের পরাক্রান্ত সেনাপতি বলিভীম নারায়ণ-কর্ত্তৃকই মূর্ত্তি সমূহ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। যাহা হউক ঐ সমস্ত মূর্ত্তি যে ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ-নিবাসী স্থনিপুণ ভাস্কর শিল্পিগণ কর্ত্তৃক নির্ম্মিত নহে, এই প্রদেশ-নিবাসী শিল্প কার্য্য অপটু লোক-কর্ত্তৃক নির্ম্মিত হইয়াছিল—মূর্ত্তি-নিচয় পর্য্যবেক্ষণ করিয়া এবংবিধ অনুভূত হয়।

 ত্রিপুররাজ্যের উপরিভাগ প্রাগুক্ত বিলোনিয়ার অন্তঃপাতী “লুংথুং” এর সান্নিধ্যে প্রবাহিত “মতাই ছড়া” (দেবতা ছড়া) নামক ক্ষুদ্র স্রোতস্বতী হইতে একটী শক্তিমূর্ত্তি প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে বলিয়া লোকে কহে। জন-সাধারণ-কর্ত্তৃক উক্ত মূর্ত্তি “মাতঙ্গিনী” নামে অভিহিত হয় এবং জ্ঞাত হওয়া যায় যে মুর্ত্তিটী “পরুশুরাম” জনপদে প্রতিষ্ঠিত আছে।


৭২
ত্রিপুরার স্মৃতি