পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হয়েছিলেন। ১৯১৯ সালের ৩ নভেম্বর (১৭ কার্তিক ১৩২৬) পুরীর সমুদ্রতীরে তাঁর মৃত্যু হয়।

 ত্রৈলোক্যনাথ-রচিত বাংলা গ্রন্থগুলি এই:

 কঙ্কাবতী ('উপকথার উপন্যাস, সচিত্র')। ১৮৯২।
 ভূত ও মানুষ ('গল্প, সচিত্র')। ১৮৯৬।
 ফোকুলা দিগম্বর ('সামাজিক উপন্যাস')। ১৯০১।
 মুক্তা-মালা ('উপন্যাস')। ১৯০১।
 ময়না কোথায়? ('উপন্যাস')। ১৯০৪।
 পাপের পরিণাম ('উপন্যাস')। ১৯০৮।
 ডমরু-চরিত ('গল্প')। ১৯২৩।

 এছাড়া, অমৃতলাল সরকারের সহযোগে তিনি ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা (১৯০৩) নামে এই সভার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস রচনা করেন এবং সুবিখ্যাত বিশ্বকোষের প্রথম দু খণ্ডের সংকলনে ভ্রাতা রঙ্গলালকে সাহায্য করেন।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস যাঁরা লিখেছেন, বাংলা উপন্যাস ও ছোটগল্পের বিকাশ যাঁরা বর্ণনা করেছেন কিংবা বাংলায় রঙ্গব্যঙ্গরসের ধারার পরিচয় যাঁরা দিয়েছেন, তাঁরা সকলেই ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়কে অতি উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এর প্রধান কারণ এই যে, তাঁর মৌলিক প্রতিভা আমাদের সাহিত্যে সম্পূর্ণ নতুন পথ তৈরি করে নিয়েছিল। ত্রৈলোক্যনাথ যখন সাহিত্যক্ষেত্রে প্রবেশ করেন, তখনো বাস্তব সমাজজীবনের চেয়ে রোমান্সের কল্পনারঙিন জগৎ বাঙালি লেখক ও পাঠকসমাজের প্রিয় ছিল। বঙ্কিমচন্দ্র-প্রদর্শিত ঐতিহাসিক রোমান্সের পথে তিনি অগ্রসর হন নি। আবার বঙ্কিমচন্দ্রের অনুসরণে সামাজিক উপন্যাস লিখতেও প্রবৃত্ত হন নি। তিনি বাস্তবকে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু সে-বাস্তবের মধ্যে এমন অপ্রিয় কিছু লক্ষ্য করেছিলেন যা মানুষের উপযুক্ত বলে মনে করেন নি। ফলে ভূতপ্রেত ও কাল্পনিক জীবজন্তুর এমন একটা জগৎ তিনি নির্মাণ করেছিলেন যার অভিনবত্ব বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝামাঝি একটা অবস্থায় পাঠককে বন্দি করে রাখে। শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় যথার্থই নির্দেশ করেছেন যে, 'প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃত ঘটনার মেশামিশিতে তিনি যে বে-পরোয়া, অকুতোভয় মনোভাব দেখাইয়াছেন, সেইখানেই তাহার বিশেষত্ব নিহিত।' বস্তুত, যদি বলা যায়, ত্রৈলোক্যনাথের এক পা ছিল বাস্তব জগতে, অন্য পা কল্পলোকে, তাহলে খুব ভুল হবে না। তাঁর প্রথম রচনা কঙ্কাবতী পাঠকসমাজে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এই কাহিনীর সূচনা বাস্তব