পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শশব্যস্ত হইয়া উঠিলেন।

 হাতযোড় করিয়া খর্ব্বুর বলিলেন,— “মহাশয়! আজি প্রাতঃকালে কি মনে করিয়া? প্রতিদিন তো সন্ধ্যার সময় আপনার শুভাগমন হয়। আজ দিনের বেলা কেন? ঘরে কুটুম্বসাক্ষাৎ আসিয়াছেন না কি? তাই কনিষ্ঠকে সঙ্গে করিয়া আনিয়াছেন যে, তাহার পিঠে বোঝাই দিয়া প্রচুর পরিমাণে রক্ত লইয়া যাইবেন?”

 মশা উত্তর করিলেন,— “না, তা নয়! সেজন্য আমি আসি নাই; কি জন্য আসিয়াছি, তাহা বলিতেছি। আপাততঃ জিজ্ঞাসা করি, তুমি বিষণ্নমুখে বসিয়া আছ কেন? এরূপ বিষণ্ন-বদনে থাকা তো উচিত নয়! মনোদুঃখে থাকিতে তোমাদিগকে আমি বারবার নিষেধ করিয়াছি। মনের সুখে না থাকিলে, শরীরে রক্ত হয় না, সে রক্ত সুস্বাদু হয় না। মনের সুখে যদি তোমরা না থাকিবে, পুষ্টকর তেজস্কর দ্রব্যসামগ্রী যদি আহার না করিবে, তবে তোমাদের রক্তহীন দেহে বসিয়া আমাদের ফল কি? তোমরা সব যদি নিয়ত এরূপ অন্যায় কার্য্য করবে, তবে আমরা পরিবারবর্গকে কি করিয়া প্রতিপালন করিব? তোমাদের মনে কি একটু ত্রাস হয় না যে, আমাদের গায়ে বসিয়া মশাপ্রভু যদি সুচারুরূপে রক্তপান করিতে না পান, তাহা হইলে, তিনি আমাদিগের উপর রাগ করিবেন?”

 খর্ব্বুর বলিলেন,— “প্রভু! শীর্ণ হইয়া যাইতেছি সত্য। আমার শরীরে ভালরূপ সুস্বাদু রক্ত না পাইলে, মহাশয় যে রাগ করবেন, তাহাও জানি। কিন্তু কি করিব, স্ত্রীর তাড়নায় আমার এই দশা ঘটিয়াছে।”

কঙ্কাবতী
১০৩