পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সকলকে সেই অন্ধকূপে বসিয়া থাকিতে হইবে। অন্ধকূপ হইতে বাহির হইলে, কি চক্ষুর ঠুলিটি খুলিলে, পাপ হইবে, জাতি যাইবে, আর 'এক-ঘোরে’ হইয়া থাকিতে হইবে। যেমন-তেমন পাপ নয়, সেই যারে বলে পাতক। কেবল পাতক নয়, যারে বলে মহাপাতক। শুধু মহাপাতক নয়, সেই যারে বলে অতি মহাপাতক। কেন। বড় যে সব জাহাজ চড়া, রেল চড়া, লেখাপড়া শেখা, মশারি করা! এইবার?”

 খর্ব্বুর বলিলেন,— “আপনারা মহাপ্রভু! যেরূপ শাস্ত্র করিয়া দিবেন, আমাদিগকে মানিতে হইবে। আপনারা আমাদিগের হর্ত্তা-কর্ত্তা-বিধাতা। আপনারা সব করিতে পারেন।”

 মশা, কঙ্কাবতী ও খর্ব্বুর হন্তীর পৃষ্ঠে আরোহণ করিয়া বনাভিমুখে যাত্রা করিলেন। প্রায় দুই প্রহরের সময় পর্ব্বতের নিকট উপস্থিত হইলেন।


ষোড়শ পরিচ্ছেদ

খোক্কোশ

নাকেশ্বরী যখন খেতুকে পাইল, তখন খেতু একেবারে মৃতপ্রায় হইয়া পড়িলেন। জ্ঞান-গোচর আর তাঁহার কিছুমাত্র রহিল না। নিশ্বাস দ্বারা নাকেশ্বরী যে কঙ্কাবতীকে দূরীভূত করিল, খেতু তাহার কিছুই জানেন না।

 খেতুকে মৃতপ্রায় করিয়া নাকেশ্বরী মনে মনে ভাবিল,— “বহুকাল ধরিয়া অনাহারে আছি, ইষ্ট-দেবতা ব্যাঘ্রের প্রসাদে আজ রন্ধন করিয়া খাইতে হইবে। এমন সুখাদ্য একেলা খাইয়া তৃপ্তি হইবে না, যাই, মাসীকে গিয়া নিমন্ত্রণ করিয়া আনি।”

 মাসী আসিতে পাছে খাদ্য পচিয়া যায়, সেজন্য নাকেশ্বরী তখন খেতুকে একেবারে মারিয়া ফেলিল না, মৃতপ্রায় অজ্ঞান করিয়া রাখিল।

 নাকেশ্বরী মাসীকে নিমন্ত্রণ করিতে যাইল। নাকেশ্বরীর মাসীর বাড়ী অনেক দূর, সাত সমুদ্র তের নদী পার, সেই একঠেঙো মুলুকের ওধারে। সেখানে যাইতে, আবার মাসীকে লইয়া আসিতে অনেক বিলম্ব হইল।

 মাসী বুড়োমানুষ। মাসীর দাঁত নাই। খেতুর কোমল মাংস দেখিয়া মাসীর আর আহ্লাদের সীমা নাই। মাসীর মুখ দিয়া লাল পড়িতে লাগিল।

 খেতুর গা টিপিয়া টিপিয়া মাসী বলিলেন,— “আহা! কি নরম মাংস। বুড়ো হইয়াছি, একঠেঙো মানুষের দড়িপনা শক্ত মাংস আর চিবাইতে পারি না। আজ দুঠেঙো মানুষের মাংস দাগা দাগা করিয়া কাটিয়া ভাজা হউক, আঙ্গুলগুলির চড়চড়ি হউক, অন্যান্য মাংস অম্বল করিয়া রাঁধা থাকুক, দুই দিন আহার করা যাইবে, গন্ধ হইয়া যাইবে না।”

 মাসী-বোনঝিতে এইরূপ পরামর্শ হইতেছে, এমন সময় বাহিরে একটি গোল উঠিল। হাতীর বংশীধ্বনি, মশার গুনগুন, মানুষের কণ্ঠস্বর, পর্ব্বতের বাহির হইতে অট্টালিকার ভিতর প্রবেশ করিল।

কঙ্কাবতী
১০৫