পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 কঙ্কাবতী বলিলেন,— “দেখ দুর্দ্দান্ত সিপাই! তোমাকে আমার একটি কাজ করিতে হইবে। তা না করিলে তোমাকে আমি কিছুতেই ছাড়িব না। এখান হইতে নক্ষত্র এক বোঝা আমি তুলিয়া লইয়া যাইব। কিছুদূর মোটটি তোমাকে লইয়া যাইতে হইবে।”

 সিপাহী আর করেন কি? কাজেই সন্মত হইলেন। কঙ্কাবতীর আঁচলে আর কতটি নক্ষত্র ধরিবে? তাই কঙ্কাবতী ভাবিতে লাগিলেন,— “কি দিয়া নক্ষত্রগুলি বাঁধিয়া লই?”

 সিপাহী বলিলেন,— “অত আর ভাবনা-চিন্তা কেন? চল, আমরা আকাশবুড়ীর কাছে যাই। কদমতলায় বসিয়া চরকা কাটিয়া সে কত কাপড় করিয়াছে! তাহার কাছ হইতে একখানি গামছা চাহিয়া লই।”

 কঙ্কাবতী ও সিপাহী আকাশবুড়ীর নিকট গিয়া একখানি গামছা চাহিলেন। অনেক বকিয়া-ঝকিয়া আকাশবুড়ী একখানি গামছা দিলেন। তখন কঙ্কাবতী আকাশের মাঠে নক্ষত্র তুলিতে লাগিলেন। বাছিয়া বাছিয়া, ফুটন্ত ফুটন্ত, আধ-কুঁড়ি, আধা-ফুটন্ত, নানাবর্ণের নক্ষত্র তুলিলেন। সেইগুলি গামছায় বাঁধিয়া, মোটটি সিপাহীর মাথায় দিলেন।

 সিপাহী ভাবিলেন,— “এতকাল আকাশে চাকরি করিলাম, কিন্তু মুটেগিরি কখনও করিতে হয় নাই। ভাগ্যক্রমে আকাশের লোক সব আজ দ্বারে খিল দিয়া বসিয়া আছে। সেই যদি আমার এ দুৰ্দশা দেখিত, তাহা হইলে আজ আমি মরমে মরিয়া যাইতাম।”

 মোটটি মাথায় করিয়া, সিপাহী আগে আগে যাইতে লাগিলেন। কঙ্কাবতী তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাইতে লাগিলেন। কিছুক্ষণ পরে খোক্কোশের বাচ্ছার নিকট আসিয়া দুইজনে উপস্থিত হইলেন! সিপাহীর মাথা হইতে নক্ষত্রের বোঝাটি লইয়া তখন কঙ্কাবতী বলিলেন,— “এখন তুমি যাইতে পার তোমাকে আর আমার প্রয়োজন নাই।” এই কথা বলতে না বলিতে সিপাহী এমনি ছুটি মারিলেন যে, মুহূর্ত্তের মধ্যে অদৃশ্য হইয়া গেলেন। কঙ্কাবতী ভাবিলেন,— “তালপাতার সিপাহী কি না! তাই এত দ্রুতবেগে ছুটিতে পারে!”

 মোটটি লইয়া কঙ্কাবতী খোক্কোশের বাচ্ছার পিঠে চড়িলেন। খোক্কোশের পিঠে চড়িয়া আকাশ হইতে পৃথিবীর দিকে পুনরায় অবতরণ করিতে লাগিলেন।


ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ

সতী

যেখানে মশা ও হাতী কঙ্কাবতীর প্রতীক্ষায় অবস্থিতি করিতেছিলেন, অবিলম্বে কঙ্কাবতী আসিয়া সেইখানে উপস্থিত হইলেন। শিকড়লাভে কৃতকার্য্য হইয়াছেন শুনিয়া, মশা ও হাতীর আনন্দের আর অবধি রহিল না। খোক্কোশের বাচ্ছাটিকে পুনরায় তাহার গর্ত্তে ছাড়িয়া, মশা ও কঙ্কাবতী হস্তীর পৃষ্ঠে আরোহণ করিলেন ও পর্ব্বত অভ্যন্তরস্থিত সেই অট্টালিকার দিকে যাত্রা করিলেন।

 অট্টালিকায় উপস্থিত হইয়া, কঙ্কাবতী চাঁদের মূল-শিকড়টুকু খর্ব্বুরের হস্তে অৰ্পণ করিলেন। খর্ব্বুর তাহার একতোলা ওজন করিয়া সাতটি গোলমরিচের সহিত অতি সাবধানে শিলে বাটিলেন। ঔষধটুিকু বাটা হইলে, ব্যাঙকে তাহা সেবন করাইলেন। ঔষধ সেবন করিয়া

কঙ্কাবতী
১২১