পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দান করিতে পারিলে, পিতৃকুলের মুখ উজ্জ্বল হইবে।”

 নিধিরাম ক্রমে আরোগ্য লাভ করিলেন। সুস্থ হইয়া তিনি এককড়ির নিকট বিদায় প্রার্থনা করিলেন। বলিলেন,— “মহাশয়! যদিও এ প্রাণ আমার অতি তুচ্ছ পদার্থ, তথাপি আপনার দয়া-মায়া কখনও ভুলিতে পারিব না, আপনার ধার কখনও শুধিতে পারিব না। আমার এমন কিছু নাই, যাহা দিয়া আপনার ঋণ পরিশোধ করিতে পারি। এক্ষণে আপনি অনুমতি করুন, আমি বিদায় হই।”

 এককড়ি বলিলেন,— “প্রাণরক্ষা করি, এমন ক্ষমতা আমার কোথায়! সমুদয় ঈশ্বরের হাত। আপনার আয়ু ছিল, আপনি রক্ষা পাইলেন। আমি আপনার কিছুই করিতে পারি নাই। দরিদ্র ব্রাহ্মণ, আমি কোথায় কি পাইব? তবে, যদি আমার প্রতি প্রসন্ন হইয়া থাকেন, তাহা হইলে একটি ভিক্ষা আপনার নিকট আমি প্রার্থনা করি।”

 নিধিরাম জিজ্ঞাসা করিলেন,— “কি মহাশয়? আজ্ঞা করুন। ক্ষমতা থাকিলে অবশ্য আপনার আজ্ঞা পালন করিব।”

 এককড়ি বলিলেন,— “ক্ষমতা আপনার সম্পূর্ণ আছে। মনে করিলেই আপনি করিতে পারেন। সত্য করুন যে, আপনি করিবেন, তাহা হইলেই বলি।”

 নিধিরাম বলিলেন,— “ক্ষমতা থাকিলে নিশ্চয় আপনার আজ্ঞা প্রতিপালন করিব।”

 এককড়ি বলিলেন,— “আমি কন্যাদায়গ্রস্ত দরিদ্র কুলীন ব্রাহ্মণ। টাকার অভাবে কন্যার বিবাহ দিতে পারি নাই। আপনি মহাকুলীন, স্বমেল স্বভাব। আপনাতে কন্যা অৰ্পণ করিলে আমার কুল রক্ষা হয়, পিতৃপুরুষদিগের মুখ উজ্জ্বল হয়। আপনি আমাকে কন্যাদায় হইতে উদ্ধার করেন, আপনার নিকট আমার এই ভিক্ষা।”

 নিধিরাম স্তব্ধ হইয়া রহিলেন। হিরন্ময়ীর রূপে-গুণে তিনি মুগ্ধ হইয়াছিলেন। হিরণয়ীকে দেখিয়া পর্য্যন্ত তাহার চিত্ত বিচলিত। তবে অধিক বয়স হইয়াছে। এ-বয়সে এরূপ লাবণ্যবতী বালিকাকে বিবাহ করা উচিত নয় বলিয়া হিরণ্ময়ীর চিন্তা মন হইতে দূর করিতে সর্ব্বদাই চেষ্টা তিনি করিতেছিলেন। সেই জন্যই পীড়া হইতে উঠিয়া সম্পূর্ণভাবে পূর্ব্বারূপে বল পাইতে না পাইতে, এ-স্থান হইতে পলাইতেছিলেন। সংসার একেবারে পরিত্যাগ করিয়া দেশপর্য্যটন, তীর্থদর্শন প্রভৃতি ধর্ম্মকর্ম্মে অবশিষ্ট জীবনযাপন করিবেন, এইরূপ মনে মনে সঙ্কল্প করিয়াছিলেন।

 নিধিরাম বলিলেন,— “মহাশয়! আমার বয়স হইয়াছে। পুনরায় বিবাহ করিবার সময় নাই। বিশেষতঃ আপনার কন্যা হিরণ্ময়ী পরম রূপবতী, কিছুতেই আমি তাহার উপযুক্ত নই। আর সংসার করিব না, এইরূপ সঙ্কল্প করিয়াছি। অতএব এ অনুরোধটি আমাকে করিবেন না। আমাকে ক্ষমা করুন।”

 এককড়ি বলিলেন,— “আপনি এইমাত্র সত্য করিলেন। দরিদ্র ব্রাহ্মণকে কন্যাদায় হইতে উদ্ধার না করিলে আপনি সত্যে পতিত হইবেন। আপনার বিবাহ করিবার বয়স যায় নাই। আপনার মত পাত্র পাইলে হিরণ্ময়ীকে ভাগ্যবতী বলিয়া জানিব। সত্যভ্রষ্ট হইবেন না।”

 নিধিরাম বলিলেন,— “আপনি আমাকে ঘোর বিপদে ফেলিলেন। হিরণ্ময়ী রূপবতী, আমি কিছুতেই তাহার উপযুক্ত পতি নই। আমাকে ক্ষমা করুন।”

 এককড়ি বলিলেন,— “আপনার আর বিপদ কি? বিপদ আমার। কন্যাদায়গ্রস্ত হইয়া আজি কয় বৎসর আমি লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরিতেছি। কিন্তু আমার টাকা নাই। বিনা টাকায় কেহ

ভূত ও মানুষ
১৩৭