পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলিলেন, —“কাল তুমি ভূতকে আর চণ্ডু দিও না; বলিও চণ্ডু ফুরাইয়া গিয়াছে, মনুষ্যালয় হইতে চণ্ডু আনিতে বলিবো।” তার পরদিন প্ৰাতঃকালে যখন ভূত চণ্ডু খাইতে আসিল, আমীররমণী তাঁহাকে বলিলেন, —“দেখ সঙ্গে করিয়া যাহা কিছু চণ্ডু আনিয়াছিলাম, সমস্ত ফুরাইয়া গিয়াছে, আজ তোমাকে খাইতে দিই। এমন আর নাই, তুমি লোকালয় হইতে চণ্ডু লইয়া আইস।” এই কথা শুনিয়া ভূতের মন বড়ই উদাস হইয়া পড়িল। কিন্তু তখনও সে জানিতে পারে নাই, কি সৰ্ব্বনাশের কথা সে শুনিল! বিরাসবদনে আপনার ঘরে ফিরিয়া গেল। যত বেলা হইতে লাগিল, শরীরে ও মনে ততই ক্লেশ হইতে লাগিল। প্রথম আকৰ্ণ পুরিয়া হাই উঠিতে লাগিল, তারপর চক্ষু দিয়া জল পড়িতে লাগিল, গা-ভাঙ্গিতে লাগিল। সৰ্ব্বশরীর ঘোর বেদনা হইল, প্ৰাণ আই-ঢাই করিতে লাগিল। সেদিন আর নিদ্রা হইল না। বৈকালবেলা খালি নলটি লইয়া প্ৰদীপের শীসের কাছে ধরিয়া একবার টানিল। কিন্তু তাঁহাতে কিছুমাত্র ক্লেশ দূর হইল। না। একান্তমনে সন্ধ্যার প্রতীক্ষা করিয়া রহিল, কখন সন্ধ্যা হইবে যে, লোকালয়ে যাইয়া চণ্ডু আনিয়া প্রাণরক্ষা করিবে। সেদিন যেই সন্ধ্যা হইল, অমনি ভূত ঘর হইতে বাহির হইল। ভীমতালের জল ভেদ করিয়া উপরে উঠিল। উপরে গিয়া আর সব চিন্তা ছাড়িয়া, কেবল চণ্ডুর অনুসন্ধানে প্ৰবৃত্ত হইল। এ-গ্ৰাম সে-গ্রাম, এ-নগর সে-নগর, এ-দেশ, সে-দেশ, সমস্ত ভারতভূমি ঘুরিল, চণ্ড কোথাও পাইল না। আবকারির এমনই কড়া নিয়ম যে, সন্ধ্যা না হইতেই সকল দোকান বন্ধ হইয়া যায়। এদিকে চণ্ড বিনা প্ৰাণ বাহির হয়। উদরেরও বিলক্ষণ গোলযোগ উপস্থিত হইল। শরীর আর বয় না, আর উড়িতে বা চলিতে পারে না। তখন ভাবিল,—“বৃথা আর ঘুরিয়া কি হইবে? মারি তো গিয়া মরি, প্ৰিয়তমার মুখ দেখিতে দেখিতে মরিব! তাহাকে বলিব, “দেখ, তোমার র ভিখারী হইয়া আমি এই প্ৰাণ বিসর্জন ৱা একটা উপায়ও করিতে পারে । অতিশয় তাই তিনিও সেদিন স্ত্রীর নিকট হইতে সকাল T I - X । ভূত কিন্তু আপনার ঘরে আসিয়াই সেইখানে শুইয়া পড়িল। শরীর এতই বিকল হইয়াছিল যে, সেখান হইতে নড়িতে আর তাহার প্রবৃত্তি হইল না। সেইখানে পড়িয়া ক্রমাগত উঃ-আঃ করিতে লাগিল । ক্রমে সমস্ত শরীর হিমাঙ্গ হইয়া গেল। সমুদয় গ্ৰন্থি শিথিল হইতে লাগিল, লিগেমেন্ট সমস্ত আলগা হইল, শরীরের জয়েন সব একেবারে খুলিয়া গেল, হাড়ের সন্ধি সমুদয় একে একে খসিয়া গেল, যাবতীয় অস্থি পৃথক পৃথক হইয়া পড়িল। উত্থানশক্তি-রহিত। ঘোর বেদনায়, ঘোর যাতনায় লুলু পড়িয়া রহিল। প্রভাত হইলে, হাসিতে হাসিতে হাত ধরাধরি করিয়া, আমীর ও আমীর-ৱমণী আসিয়া সেইখানে উপস্থিত হইলেন। আমীর বলিলেন, —“কি হে বাপু! সভ্য ভব্য নব্য ভূত! পুরাতন কথাটা কি কখনও শুন নাই?”—“থােডা থােডা কবৃকে খাও-মুঝে, ময় লণ্ড কডুয়া। আর জরু বেচাে, গরু বেচাে, মুঝকো লাও ভেড়ুয়া।” ইহার অর্থ এই, আফিম বলিতেছেন, “অল্প অল্প করিয়া আমাকে প্ৰথম খাও; কেন না, আমি তিত লাগি। এখন ভেড়ুয়া। স্ত্রী বিক্রয় কর, কি গরু বিক্রয় কর, বিক্রয় করিয়া যেখােন হইতে পাও আমাকে লইয়া আইস।” ভূত চিচি করিয়া বলিল,—“এ বিপদের সময় মুখনাড়া দিচ্ছিস তুই আবার কে?” আমীর বলিলেন, —“আমি আমীর, এই রমণীর স্বামী, যাহাকে তুই নিদারুণ ক্লেশ দিয়াছিস; তাই আজ তোর যাতনা দেখিয়া বড়ই গ্ৰীতিলাভ করিতেছি।” ভূত বলিল,- S8 দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com%ি"**********