পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুচরিত্রা স্ত্রীলোক বলিয়া পূৰ্ব্বে যে সন্দেহ হইয়াছিল, তাহার কথা শুনিয়া এক্ষণে সে সন্দেহ অনেকটা দূর হইল। এতক্ষণ পৰ্যন্ত তাহার মুখশ্ৰী আমি নিরীক্ষণ করিয়া দেখি নাই। আমার খাবার প্রস্তুত ছিল; দুই-চারি কথায় তাহাকে বিদায় করিয়া দিব, কেবল এই ইচ্ছা! করিতেছিলাম । এক্ষণে লণ্ঠনটি পুনরায় তুলিয়া ধরিলাম। লণ্ঠনের আলোকে পূৰ্ব্বাপেক্ষা উজ্জ্বলভাবে বালিকার মুখের উপর পড়িল। বালিকার রূপ ও ভাবভঙ্গি দেখিয়া আমি চমকিত হইলাম। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি যে, তাহার বয়স ত্রয়োদশ কি চতুৰ্দশ বৎসর। একখানি সামান্য সাদা কালাপেড়ে কাপড় সে পরিধান করিয়াছিল। কাপড়খানি সামান্য বটে; কিন্তু পরিষ্কার ছিল। তাহাতে পাছা ছিল না। কাপড়ের ভিতর শেমিজ ছিল; কিন্তু গায়ে জ্যাকেট কিংবা অন্য কোনপ্রকার জামা ছিল না। বালিকার দুই হাতে দুইগাছি সোনার বালা ছিল। কানে দুইটি ইয়ারিং ছিল। শরীরের অন্য কোন স্থানে কোনরূপ গহনা ছিল না। মস্তকের অৰ্দ্ধেকভাগ সেই কালাপেড়ে শাড়ী দ্বারা আবৃত ছিল। ঝিউড়ি মেয়ে ঘর হইতে বাহির হইলে যেরূপ লজ্জা করা উচিত বোধ করে, অথচ লজ্জা করিতে তাহার লজ্জা হয়, মস্তকের অৰ্দ্ধভাগ কাপড় দ্বারা আবরণে যেন সেইরূপ ভাব ঠিক প্ৰকাশ পাইতেছিল। বালিকার হইয়া সেই কাপড়ের আবরণ যেন সকলকে বলিতেছিল,-“লজ্জা করা আমার উচিত বটে; কিন্তু লজ্জা করিতে এখনও আমি শিক্ষা করি নাই, সেজন্য তোমরা সকলে আমার নিন্দা করিও না।” বালিকা সেদিন বোধ হয় চুল বঁধে নাই। সে নিমিত্ত কোঁকড়া কোঁকড়া কেশরাশি খোলো হইয়া, তাহার কাধের মানুষের চক্ষু কৃষ্ণবর্ণ হইয়া থাকে; কিন্তু র বিষয় এই যে, এ বালিকার তাহা নহে। ইহার চক্ষুর কিরূপ বর্ণ, তাহা আমি ঠিক রয়া বলিতে পারি না। নীলবৰ্ণ সাগরজলে সূৰ্যকিরণ মিশ্ৰিত করিলে যেরূপ এক নূতন প্রকার বর্ণের সৃষ্টি হয়, বালিকার চক্ষুতারা দুইটি সেইরূপ এক অদ্ভুত নূতন বর্ণেরঞ্জিত ছিল। আমার এত বয়স হইল, এরূপ চক্ষু কখন কাহারও দেখি নাই। চক্ষুর পাতাগুলি দীর্ঘ, নিবিড় ও ঘোর কৃষ্ণবর্ণ। ভ্রযুগলও সেইরূপ; কিন্তু অধিক ঘন বা স্কুল নহে। ফল কথা, বালিকা বিলক্ষণ সুন্দরী। কথাবাৰ্ত্তা ও ভাবভঙ্গি দেখিয়া তাহাকে ভদ্রকন্যা বলিয়া বোধ হইল। পাপ, কপটতা বা কুচিন্তা কখনও যে তাহার মনে উদয় হয় নাই, তাহাও সেই ভাবভঙ্গিতে প্ৰকাশ পাইতেছিল। সত্য, সরলতা, সাধুতা ও শিশুভাব যেন তাহার মুখশ্ৰীতে দেদীপ্যমান ছিল। এই অপূৰ্ব্ব রূপ, এই সরল ভাব দেখিয়া কে না বশ হইয়া পড়ে? তাহার উপর, যখন সেই বিমল মুখজ্যোতিঃ মনোদুঃখে মলিনতায় আচ্ছাদিত হয়, যখন সেই সূৰ্যকিরণমিশ্ৰিত সগরজল-গঠিত চক্ষু দুইটি হইতে অশ্রবারি বিগলিত হয়, তখন সেই বালিকার দুঃখনিবারণের নিমিত্ত লোকে কি না করিতে পারে? ক্ষুধা-তৃষ্ণা আমি সব ভুলিয়া গেলাম। আমার অন্ন প্ৰস্তৃত; তাহা পড়িয়া রহিল। SS8 দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com"ির্ড”********