পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যাপম্যায়ের মন যে কি হইতেছে!” অজ্ঞান অবস্থাতেই কুসী চীৎকার করিয়া উঠিল,- “হীরালাল! বাবু! কোথায়! ইস্! বাবু! তোমার কাপড়ে কি রক্ত! চাদর ফুটিয়া বাহির হইতেছে। যাই আমি ডাক্তার আনি।” তৃতীয় প্রতিবাসিনী বলিলেন,— “তোমাদের বিবেচনা নাই। বিকারের রোগীর কাছে মৃত্যুসংবাদ দিতে নাই। তোমরা হীরালালের গল্প করিলে, আর কুসীও দেখ সেই কথা বকিতে লাগিল।” ইহার পূৰ্ব্বে প্ৰলাপের সহিত কুসী। আরও অনেকবার “বাবু”র নাম করিয়াছিল। প্রতিবাসিনীদিগের কথায় কুসীর মাসী কোনও উত্তর করিলেন না। কুসী প্রায় কুড়িদিন এইরূপ অজ্ঞান অবস্থায় রহিল। তাহার পর ক্রমে বিকার কাটিয়া গেল। ক্ৰমে ক্ৰমে সে স্থির হইল। ক্রমে ক্ৰমে কুসী আরোগ্যলাভ করিতে লাগিল। এ যাত্ৰা কুসীর প্রাণরক্ষা হইল বটে, কিন্তু তাহার শরীর একেবারে ভগ্ন হইয়া গেল! সে গোল গড়ন ঘুচিয়া তাহার হস্ত পদ অস্থি চৰ্ম্ম-সার হইল। সে উজ্জ্বল ফুটফুটে গীেরবর্ণ ঘুচিয়া একপ্রকার রক্তহীন পাণ্ডুবৰ্ণে তাহার মুখশ্ৰী আচ্ছাদিত হইল। তাহার ভাসা ভাসা সে চক্ষু দুইটি বসিয়া গেল। চক্ষুর কোলে কালি মাড়িয়া দিল। যে চক্ষুর বর্ণ আমি সূৰ্য্য-কিরণমিশ্রিত নীল সমুদ্রজলের সহিত তুলনা করিয়াছিলাম, কিরূপ ঘোলা হইয়া সে চক্ষু এখন বিবৰ্ণ হইয়া গেল। তাহার মনও বিকৃত হইয়াছিল। ঠিক উন্মাদ নয়। কোনরূপ উপদ্রব সে করিত না। একস্থানে চুপ করিয়া সৰ্ব্বদাই সে কি ভাবিত। তাহার সহিত কথা কহিলে সে উত্তর দিত না । সৰ্ব্বদাই এরূপ অন্যমনস্কভাবে সে বসিয়া থাকিত যেকোহারও কথা সে শুনিতে পাইত কি না। সন্দেহ। কাছে দাড়াইয়া তিন চারিবার তাহাকে ডাক্সিলে, তবে তাহার চমক হইত। চমক হইয়া লােকের মুখপানে সে ফ্যািল-ফ্যাল করিয়া চৰ্হি’থার্কিত। তাহার পর হয় তাে কেবল “আঁ্যা” এই কথাটি বলিয়া পুনরায় অন্যমনস্ক ভুইকঁর্যইত। রোগ হইতে উঠিয়া প্রথম প্রথম কুসীর শরীর ও মনের অবস্থা এইরূপ ফুৰ্ফছ হইয়াছিল। তাহার সৌন্দৰ্য পুনরায় কিছু কিছু ফুটিয়াছিল, পূৰ্ব্বাপেক্ষা তাহার মনে জ্ঞানেরও সঞ্চার হইয়াছিল। সকলের কথা সে বুঝিতে পারিত, দুই একটি কথার উত্তরও প্ৰদান করিত। কিন্তু যতই হউক, কাশীতে আমি যে কুসী দেখিয়াছিলাম, সে কুসীর আর কিছুই ছিল না। লোচন ঘোষ যে দুইশত টাকা প্রেরণ করিয়াছিল, তাহার অধিকাংশ কুসীর চিকিৎসায় খরচ হইয়া গেল। কুসীর মাসীর বড় চিন্তা হইল। হীরালাল নাই। তাঁহার নিজের যাহা হউক, কুসীকে কে প্রতিপালন করিবে? তিনি অকূল পাথার দেখিতে লাগিলেন। ভাবিয়া চিন্তিয়া আর কোন উপায় ঠিক করিতে না পারিয়া, তিনি কুসীর পিতাকে একখানি পত্র লিখিলেন। কুসীর মেসো-মহাশয়ের কাল হইয়াছে, তাঁহারা নিঃসহায় হইয়া পড়িয়াছেন, চিঠিতে কেবল সেই কথা লিখিলেন। কুসীর যে বিবাহ হইয়াছিল, তাহার পর কুসী যে বিধবা হইয়াছে, ভগিনীপতিকে সে সকল কথা তিনি কিছু লিখিলেন না। তিনি ভাবিলেন যে, এখনও কন্যা অবিবাহিতা আছে, এই কথা মনে করিয়া তিনি চিন্তিত হইবেন ও সত্ত্বর পত্রের উত্তর করিবেন। যে কারণেই হউক, তিনি কুসীর বিবাহের কথা চিঠিতে উল্লেখ করেন নাই। সৌভাগ্যক্রমে সেই সময় বৰ্ম্মণীর মৃত্যু হইয়াছিল। রসময়বাবুর চক্ষু উন্মুক্ত হইয়াছিল। অনেক কষ্টে পািনদােষ হইতে তিনি নিভৃতি পাইয়াছিলেন। শালীর পত্ৰ পাইয়া তাঁহার মনে অতিশয় অনুতাপ হইল। কন্যার প্রতি তিনি যে অতি নিষ্ঠুর ব্যবহার করিয়াছেন, তখন তাহা ՀԵ8 দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboicom:5'"