পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জানেন যে, আমি মরিয়া গিয়াছি। দুই বৎসর অতীত হইয়া গেল। তাঁহারা হয়তো আমাকে ভুলিয়া গিয়াছেন! চিঠি লিখিতে আমার লজ্জা করিতেছে।” ‘বাবুর নিকট হইতে আমি তাহার পিতার ঠিকানা জানিয়া লইলাম। আমি নিজেই তাঁহাকে পত্ৰ লিখিলাম। প্ৰত্যুত্তর আসিবার সময় অতীত হইল, তথাপি আমি আমার পত্রের উত্তর পাইলাম না। আমার ভয় হইল। তিনি কি এখনও ‘বাবুকে ক্ষমা করেন নাই? অথবা সে স্থানে কি কোনরূপ দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে? চারিদিন পরে আমার চিন্তা দূর হইল। হীরালালের পিতা নিজেই আসিয়া উপস্থিত হইলেন। হীরালালের মাতা ও এক ভ্ৰাতাও তাঁহার সঙ্গে আসিয়াছিলেন!। বলা বাহুল্য যে, পুত্র জীবিত আছে শুনিয়া পিতা-মাতা যেন স্বৰ্গে হাত বাড়াইয়া পাইলেন। আমার পত্ৰ পাইয়া হীরালালের মাতা পুত্রকে সত্ত্বর দেখিবার নিমিত্ত কাদিয়া-কাটিয়া ধুম করিয়াছিলেন। সেজন্য চিঠি না। লিখিয়া তাহারা নিজেই আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ভাগ্যে রসময়বাবুর বাড়ীটি বড় ছিল, সেজন্য সকলের তাঁহাতে স্থান হইল। পিতা-পুত্রে কিরূপে সাক্ষাৎ হইল, কুসীকে তাঁহারা কত আদর করিলেন, কত বসন-ভুষণে তাহাকে তাহারা ভূষিত করিলেন, রসময়বাবু ও মাসীর সহিত তাঁহাদের কিরূপ পরিচয় হইল, আমার সহিত তাঁহাদের কিরূপ সদ্ভাব জন্মিল, সে সব কথা লিখিয়া পুস্তকের কলেবর আর বৃদ্ধি করিব না; ফলকথা এই যে, সকলের সহিত সকলের বিশেষরূপে সদ্ভাব হইল। পুত্রকে জীবিত পাইয়া, কুসী হেন পুত্রবধূ পাইয়া, হীরালাল হেন জামাতা ধাইয়া, তাহার পিতা-মাতার ন্যায় সমৃদ্ধিশালী সদাশয় কুটুম্ব পাইয়া রসময়বাবু ও র মাসী পরম আনন্দিত হইলেন । সকলের আনন্দে আমিও আনন্দিত হইলাম। ○ কিছুদিন সেই স্থানে বাস করিয়া পতা-মাতা পুত্রবধু লইয়া দেশে প্রত্যাগমন করিতে ইচ্ছা করিলেন। কুসুমের লইয়া যাইবার নিমিত্ত তাহারা বিশেষরূপে অনুরোধ করিলেন, কিন্তু ত্ব অন্য কোন অভিভাবক ছিলেন না, সেজন্য তখন তিনি যাইতে পারিলেন না। কিন্তু কিছুদিন পরে রসময়বাবু শ্বশুরবাড়ী-সম্পৰ্কীয়া একজন বয়স্ক স্ত্রীলোক অভিভাবকস্বরূপে পাইলেন। মাসী এখন কুসুমের নিকটে আছেন। আমাকেও সঙ্গে লইয়া যাইবার নিমিত্ত হীরালাল নিজে ও তাহার পিতা অনেক অনুরোধ করিলেন। সে প্রস্তাবে প্রথম আমি সম্মত হইতে পারি নাই। কিন্তু কুসী এক কাণ্ড করিয়া বসিল। দেশে প্রত্যাগমন করিবার দুইদিন পূৰ্ব্বে একদিন দুই প্ৰহরের সময় আমি বৈঠকখানায় শয়ন করিয়া আছি। কুসী আস্তে আস্তে আমার শিয়রে আসিয়া বসিল। শিয়রে বসিয়া আমার পাকা চুল তুলিতে লাগিল। পাকা চুল আর কি ছাঁই তুলিবে, আমার অধিকাংশ চুল পাকিয়া গিয়াছিল, অল্পই কাঁচা ছিল। আমার সে মাথা খুঁটিতে লাগিল । মাথা খুঁটিতে খুঁটিতে কুসী বলিল,— “জ্যেঠা-মহাশয়! আপনি আমাদের সঙ্গে সেই পূৰ্ব্বদেশে যাইবেন কি না, তাহা বলুন।” আমি উত্তর করিলাম,- “আমি কোথায় যাইব? তুমি যাইবে শ্বশুরবাড়ী, সে স্থানে আমি যাই আমি এই কথা বলিয়াছি, আর কুসী। আমার মাথার অনেকগুলি চুল একসঙ্গে ধরিয়া একটু টান মারিল। যত লাগুক, না লাণ্ডক আমি কিন্তু বলিয়া উঠিলাম,- “উঃ! লাগে, ছাড়িয়া দাও!” \OR দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.com%"oooooR