পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগ্রহসহকারে সকলেই সেই গল্প শুনিতে ইচ্ছা করিলেন। কিন্তু ঘনশ্যামবাবুর মনে মনে গৌরব বাড়িয়া গেল। তিনি বলিলেন,- “না না, সে মিথ্যা গল্প। লোকটা গল্পে। তাহার কথা বিশ্বাস হয় না। সে গল্প শুনিবার উপযুক্ত নহে।” হলধর বলিলেন,- “যদি বেতাল-পঁচিশের মত গল্প হয়, তাহা হইলে এই বাদলা সময় বড়ই মিষ্ট লাগিবে। বল না, ভাই ঘনশ্যাম! সে কি গল্প?” ঘনশ্যাম উত্তর করিলেন, — “সে কাজের গল্প নহে। সে লোকটা হয়তো গাঁজাখোর। তাহার গল্প শুনিবার উপযুক্ত নহে।” রাঘব বলিলেন,- “আমরাই কোন গাঁজাখোঁর নাই! গাঁজাখোরের গল্প গাঁজাখোরকেই ভাল লাগে ।” ঘনশ্যাম বলিলেন,- “গাজাখোর বলিলাম বটে, কিন্তু গাঁজা খাইতে তাহাকে আমি কখন দেখি নাই। গুডুক পৰ্যন্ত সে খায় না। তবে তাহার নিজের মুখেই আমি শুনিয়াছি যে, সে একবার পাগল হইয়া গিয়াছিল। পাগলের গল্প শুনিয়া কি হইবে?” যাদব বলিলেন,- “তা হউক! পাগলের গল্পই আমরা শুনিব।” এইরূপে সকলে অনেক সাধ্যসাধনা করিলেন, কিন্তু ঘনশ্যাম সে গল্প বলিতে কিছুতেই সম্মত হইলেন না। নিরাশ হইয়া সকলে অন্য প্রসঙ্গ আরম্ভ করিলেন। তখন ঘনশ্যামবাবুর ভয় হইল। তিনি মনে করিয়াছিলেন, সকলে যখন আরও অনেক সাধ্যসাধনা করিবে, তখন তিনি গল্প আরম্ভ করিবেন। এখন আর কেহ অনুরোধ করিল নৃ দেখিয়া তাঁহার ভয় হইল যে, পাছে গল্পটি বলা না হয় । তিনি ভাবিলেন, আর একবার করিলেই আমি গল্প করিব। ঘনশ্যামবাবুকে নিজেই সেই কথা র ভাল লাগিবে কি না, সেই ভয়ে আমি আডিডাধারী মহাদেববাবু এতক্ষণ চুপ করিয়াছিলেন । গন্ত্রীর স্বরে এখন তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন,- “গড়গড়ি মহাশয় কে?” ঘনশ্যাম উত্তর করিলেন,- “সেই বাঁকুড়ার লোক, যিনি আমাদের নিকট তাঁহার অদ্ভুত জীবনবিবরণ প্ৰদান করিয়াছিলেন। তাঁহার নিবাস মানভূম জেলা। কিন্তু এখন তিনি বাঁকুড়া জেলায় শ্বশুরালয়ে বাস করিতেছেন। তিনি লেখাপড়া জানেন। ইংরাজীতে দুই-একটা পাশ দিয়াছেন। কিন্তু তাহার কাহিনী শুনিলে চমৎকৃত হইতে হয়। ঠিক আরব্য উপন্যাস কি বেতাল-পঁচিশের গল্প।” মহাদেববাবু বলিলেন, — “গল্পটি যদি এত ভাল, তবে বলই না কেন, ছাই! কিন্তু সকলে যতই তোমায় অনুরোধ করিল, ততই যেন তোমার লেজ মোটা হইয়া উঠিল।” ঘনশ্যাম বলিলেন, — “আপনার যখন শুনিতে ইচ্ছা হইয়াছে, তখন নিশ্চয় আমি বলিব। কিন্তু এ একটি গল্প নয়। আরব্য উপন্যাসের মত অনেকগুলি গল্প। দিনারজাদির মত আজ সূচনা করিয়া রাখি। তাহার পর আমার খাতাখানি আনিয়া প্রতিদিন কিস্তিবন্দি করিয়া কিছু কিছু বলিব।” মহাদেববাবু সে কথায় সম্মত হইলেন। ঘনশ্যামবাবু গল্প আরম্ভ করিলেন। ঘনশ্যামবাবু বলিলেন,- “যাহার নিকট আমি এ গল্প শুনিয়াছি, তাহার নাম সুবল গড়গড়ি। আমার নিজের কথায় আমি এ গল্প করিব না; গড়গড়ি মহাশয় যেভাবে আমাদের বাসায় বলিয়াছিলেন, আমিও সেইভাবে তাঁহার কথায় গল্পটি করিব।” VObr দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboicom 26