পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হিসাব দেখাইল। কিন্তু সে যে আমাকে মিথ্যাকথা বলিতেছে, আর তাহার চরিত্র যে নিষ্কলঙ্ক নহে, এখন তাহা আমি নিশ্চয় বুঝিতে পারিলাম। আমি মনে করিলাম যে, ইহার লেখাপড়া আর হইবে না, ইহাকে আর কলিকাতায় রাখা উচিত নহে। দেশে লইয়া গিয়া শীঘ্রই ইহার বিবাহ দিতে হইবে। এইরূপ চিন্তা করিয়া আমি তাহাকে দেশে লইয়া যাইবার নিমিত্ত অনেক চেষ্টা করিলাম। কিন্তু সে কিছুতেই সম্মত হইল না। কলিকাতায় থাকিয়া এখন হইতে যত্ন করিয়া লেখাপড়া শিখিবে, আমার নিকট বারবার সে এইরূপ অঙ্গীকার করিল। অগত্যা একেলাই আমি দেশে প্রত্যাগমন করিলাম। বাটী। গিয়া আমি নিশ্চিন্ত হইতে পারিলাম না । তাহার বিবাহের আয়োজন করিতে লাগিলাম। কিন্তু দুৰ্ভাগ্যবশতঃ এই সময়ে আমাদের মাতাঠাকুরাণীর পরলোক হইল। সুতরাং বিবাহ বিষয়ে অন্ততঃ একবৎসরকাল বিলম্ব হইয়া গেল। মাতার শ্ৰাদ্ধোপলক্ষে কনিষ্ঠকে দেশে আনাইলাম। তাহার চালচলন দেখিয়া আমি বড়ই অসন্তুষ্ট হইলাম। মনে করিলাম যে, আর তাহাকে কলিকাতায় পাঠাইব না। মিষ্ট বাক্যে তাঁহাকে অনেক বুঝাইলাম, কিন্তু সে আমার কথা শুনিল না । আমার অমতেই কলিকাতায় চলিয়া গেল । কলিকাতায় আমার দুই-তিনটি বন্ধু ছিলেন। আমার ভ্রাতার প্রতি একটু লক্ষ্য রাখিতে তাহাদিগকে আমি অনুরোধ করিয়াছিলাম। তাহারা আমাকে মাঝে মাঝে পত্ৰ লিখিতেন। সেই সমুদয় পত্রে ক্রমাগতই মন্দ সংবাদ আসিতে লাগিল। আমার ভ্রাতার চরিত্র দিন দিন মন্দ হইতে মন্দতর হইতে লাগিল । ভ্রাতাও আমার নিকট ক্রমাগত টাকা চাহিতে লাগিল। এতদিন মাতার নিকট হইতে .ে টাকা লইয়া সে আকুলান কুলান কিরিত। এখন মাতা নাই । টাকার নিমিত্ত না লিখিলে আর উপায় নাই। প্রথম প্ৰথম ভয়ে ভয়ে নানারূপ ওজর করিয়া র নিকট টাকা চাহিত। কখন পীড়া হইয়াছে, কখন চুরি গিয়াছে, কখন হারাইয়া গিয়াছে, পুস্তক কিনিতে হইবে, কাপড় কিনিতে হইবে,-অন্যায় র নিমিত্ত টাকা আবশ্যক হইলে প্রথম প্রথম এইরূপ নানাপ্রকার ওজর করিয়া সে আমাকে চিঠি লিখিত। কিন্তু ক্ৰমে তাহার সে ভয় দূর হইল। পৈতৃক বিষয়ের সে একজন অংশীদার, অৰ্দ্ধাংশের উপর তাহার সম্পূর্ণ অধিকার আছে, সেই টাকা লইয়া সে যাহা ইচ্ছা করিবে,- ক্রমে ক্রমে সে আমাকে এইরূপ অসম্মানসূচক পত্র লিখিতে লাগিল। বলা বাহুল্য যে, এইরূপ পত্ৰ পাইয়া প্ৰথম আমি যারপরনাই আশ্চৰ্য্য হইলাম ও তাহার পর ঘোরতর দুঃখিত হইলাম। ভ্রাতাকে বুঝাইবার নিমিত্ত আমি কলিকাতায় আসিলাম। সে স্থানে আসিয়া আমি তাহাকে অনেক বুঝাইলাম। কিন্তু সে আমার মুখের উপর উত্তর করিতে লাগিল। যাহাকে পুত্ৰবৎ স্নেহ করি, যাহাকে প্রাণ অপেক্ষা ভালবাসি, সে আমার সহিত এইরূপ কথাবাৰ্ত্তা করিতে লাগিল, এ দুঃখ কি আর রাখিবার স্থান আছে! ভ্রাতাকে কত বুঝাইলাম, কত মিনতি করিয়া তাহাকে বলিলাম। কিন্তু আমার কথা অপেক্ষা তাহার বন্ধুদিগের কথা তাহার নিকট অধিক হইল। দেশে লইয়া যাইবার নিমিত্ত কাদিতে কাদিতে আমি তাহার হাত ধরিলাম। আমার হাত ছাড়াইয়া সে বাসা হইতে চলিয়া গেল। ঘনশ্যাম বলিলেন- "গড়গড়ি মহাশয় এইরূপে আমাদের নিকট তাহার জীবন-বিবরণ প্ৰদান করিতে লাগিলেন। আজ রাত্রি হইয়াছে, আজ এই পৰ্যন্ত থাকুক। কাল আমার খাতা লইয়া আসিব। যতোদূর হয়, কাল পুনরায় গড়গড়ি মহাশয়ের গল্প করিব।” VOYo দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboicon:5'"