পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছোবড়ার মত, স্কন্ধাদেশ পৰ্যন্ত লন্বিত ছিল। তাহার স্তন নাভিদেশ পৰ্যন্ত পড়িয়াছিল। অলঙ্কারস্বরূপ তাহার দুই কৰ্ণে দুইটি শুভ্ৰবর্ণের কৃমি বুলিতেছিল। নােলোকস্বরূপ নাসিকাতেও একটি কৃমি ছিল। সেই কৃমির অগ্রভাগে মুক্তার স্থানে বৃহৎ একটি কোলা ভেক ঝুলিতেছিল। মূৰ্ত্তিািটর কোমর রক্তবর্ণের ঘাগরা দ্বারা আবৃত ছিল, কিন্তু সে ঘাগরা কেবল জানু পৰ্যন্ত পড়িয়াছিল। তাহার নিম্নে শুষ্ক বঁশের ন্যায় পা দুইখানি অনাবৃত ছিল। মুখমণ্ডলে মানুষের যে স্থানে চক্ষু থাকে, ইহার সেই স্থানে দুইটি কোটির ছিল, আর সেই কোটরের মধ্যে দুইটি রক্তবর্ণের বর্তুল ঘূর্ণিত হইতেছিল। এখন অন্ধকার হইয়া গিয়াছিল। কিন্তু এই ভয়াবহ মূৰ্ত্তি মাঝে মাঝে মুখব্যাদান করিতেছিল, আর সেই সময় তাহার মুখের ভিতর হইতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বাহির হইতেছিল। সেই অগ্নির আলোকে আমি ইহার শরীরের ভাবভঙ্গী দেখিতে পাইলাম। সেই আলোকে আমি ইহার দন্ত দুই পাতিও দেখিতে পাইলাম। কি দীর্ঘ, কি উজ্জ্বল শ্বেতবর্ণের দন্ত! যেন নরমাংস চিবাইবার নিমিত্তই সেই দন্ত গঠিত হইয়াছে। এরূপ ভয়ানক দৃশ্য পূৰ্ব্বে আমি কখন দেখি নাই। ভয়ে আমার প্রাণ আকুল হইয়া উঠিল। নীরবে গাছের উপর আমি চুপ করিয়া বসিয়া রহিলাম। আমি যে বৃক্ষে বসিয়াছিলাম, এই ভয়াবহ মূৰ্ত্তি আসিয়া সেই বৃক্ষে আরোহণ করিল। কিছুদূর উঠিয়া একটি স্কুল মাথার উপর অশ্বারোহণের ন্যায় সে উপবিষ্ট হইল। তাহার পর বিড়বিড় করিয়া সে কি রূপ শব্দ করিল। আর সেই মুহুৰ্ত্তেবৃক্ষটি আকাশের উপর উঠিয়া হু-হু শব্দে বায়ুর ন্যায় চলিতে লাগিল। এখন আমি সকল কথা বুঝিতে পারিলাম। গাছটি ডাকিনীর গাছ। সেই অদ্ভুত জীব ডাকিনী ব্যান্তীতু আর কিছুই নহে। পূৰ্ব্বে আমার ধারণা ছিল যে, ডাকিনীদিগের আকৃতি ঠিক শ্ৰেষ্ঠ হয়। কিন্তু আজ আমার সে ভ্রম দূর হইল। এখন আমি বুঝিতে পারিলাম যে, গর আকৃতি কতকাংশে মানুষের মত হইলেও ইহারা অতি ভয়াবহ জীব। গাছ, দেশ প্রদেশ নদ নদী অতিক্রম কষ্ট্ৰীয়া চলিতে লাগিল। রাত্রি প্রায় দুই প্ৰহরের সময় এক পাৰ্ব্বত্য প্রদেশে গিয়া উপস্থিত হুইট্র’ চারিদিকে গিরিশ্রেণী, সেই সমুদয় গিরিশ্ৰেণী নিবিড় অরণ্যে আবৃত। ইহাই কি হিমালয় প্রদেশ? এই স্থানে উপস্থিত হইয়া বৃক্ষ পৃথিবীতে অবতরণ করিল। পৃথিবী স্পর্শ করিবামাত্র ইহার মূল এরূপভাবে ভূমিতে লাগিয়া গেল, যেন বীজ হইতে উৎপন্ন হইয়া বৃক্ষটি সেই স্থানেই চিরকাল বৰ্দ্ধিত হইয়াছে। ডাকিনী লম্ফ প্রদান করিয়া বৃক্ষ হইতে নামিল। সেই মুহুৰ্ত্তে নিকটস্থ এক গিরিগহবর হইতে আর একটি ডাকিনী বাহির হইল। তাহারও আকৃতি ঠিক প্রথম ডাকিনীর মত ছিল। কিন্তু ইহার মুখ কৃষ্ণবর্ণের ঝুনা নারিকেলের মত নহে, শুষ্ক অলাবুর মত। দ্বিতীয় ডাকিনী নিকটে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল,— “নারিকেলমুখী! মুণ্ড আনিয়াছ?” তাহার প্রশ্ন শ্রবণ করিয়া আমি বুঝিতে পারিলাম যে, প্রথম ডাকিনীর মুখ নারিকেলের মত, সেই জন্য তাহার নাম নারিকেলমুখী! নারিকেলমুখী উত্তর করিল,— “হাঁ লাউমুখী! মুণ্ড আনিয়াছি! ভাল মুণ্ড! আজি চমৎকার ভাটা খেলা হইবে।” নারিকেলমুখীর এই উত্তরে আমি বুঝিতে পারিলাম যে, গহবর হইতে যে ডাকিনী হইল, তাহার নাম “লাউমুখী।” লাউমুখী বলিল,— “তবে আমি আমার মুণ্ড লইয়া আসি, আর জয়-পরাজয় বিচার করিবার নিমিত্ত ভূমিকম্প-দাদাকে ডাকিয়া আনি।” এই কথা বলিয়া পুনরায় সে গিরিগহবরে প্রবেশ করিল। অল্পীক্ষণ পরে সে টাটকা একটি

  • /37-ՀՈcii VORd

sNAls viði (SS BS! ro www.amarboi.com ro