পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যেরূপ হইয়াছিলাম, তাহা অপেক্ষা বােধ হয়, অধিক শোকাকুলা বা অধিক অধীরা হইতাম না। লবের ভয়ে অধিক কাঁদিতে পারিলাম না। মনের ভিতর শোকানল গুমে গুমে জুলিতে লাগিল । হায়! কি করিয়া আমি পুনরায় পাড়ের নিকট এ পোড়া মুখ বাহির করিব? আমি কুশির বাবাকে কি বলিব! কোনরূপে সে কাল-রাত্রি কাটিয়া গেল। তাহার পরদিন লব ও আমি পুনরায় কূপের ধারে গিয়া বসিলাম। সাস্তুনা করিতে করিতে আমি লবকে একবার বলিয়াছিলাম যে, “কুশি স্বর্গে গিয়াছে।” লব সেই কথাটি ক্রমাগত তোলা-পাড়া করিতে লাগিল । লব বলিল, “স্বৰ্গ উপরে, যে স্থানে সূৰ্য উঠে, চন্দ্ৰ উঠে, নক্ষত্র উঠে। কুশি সেখানে যায় নাই, কুশি কৃপের ভিতর গিয়াছে। সেখানে অন্ধকার, সেখানে পাতাল; সেখানে স্বৰ্গ নয়। কুশি যদি স্বর্গে যায়, তাহা হইলে প্রথম সে কৃপ হইতে উঠিবে, তাহার পর স্বর্গে যাইবে । সেই সময় আমি তাহাকে ধরিয়া ফেলিব, তাহাকে স্বর্গে যাইতে দিব না। চল, পাড়েনি, তাহাকে ধরিবার নিমিত্ত কূপের ধারে গিয়া আমরা বসিয়া থাকি।” কি করি! ছেলেকে তা না হইলে কিছুতেই সুস্থির রাখিতে পারি না। কাজেই দুইজনে কৃপের ধারে গিয়া বসিয়া রহিলাম। বাজার হইতে খাবার আনাইয়া লবকে দিলাম, কিন্তু সে কিছুই খাইল না। বিরস বদনে, একান্তমনে, সমস্তদিন কেবল কূপের দিকে সে চাহিয়া রহিল। সন্ধ্যা হইলে অনেক বুঝাইয়া লবকে লইয়া বাড়ী যাইলাম। কিন্তু লব বলিল,- “পাড়েনি! আজ আমি ঘরের ভিমুহুর শুইব না। ঘরের বাহিরে এই স্থান হইতে পাতকো দেখা যায়, কূপের দিকে চাহিয়া স্থানে বসিয়া থাকিব। কৃপ হইতে কুশি যখন উঠিবে, তখন তাহাকে ধরিয়া আনিব ॥২১ কি করি! চারপাই আনিয়া সেই স্থানে বসিয়া রহিলাম। জ্যোৎস্না রাত্রি ছিল। লব একদৃষ্টি কূপের দিকে চাহিয়া রহিল। অষ্টমীর চক্ষু দিয়া অবিরল ধারায় অশ্রুবারি বিগলিত হইতে লাগিল । রাত্রি প্রায় দুইপ্রহর। শোকে তাপে অনাহারে, আমি অতিশয় শ্ৰান্ত হইয়াছিলাম। বসিয়া বসিয়াই একটু অবসন্ন হইয়া পড়িলাম; আমার চক্ষু দুইটি একটু বুজিয়া আসিল। এমন সময় সহসা লব চীৎকার করিয়া উঠিল,— “ঐ কুশি, ঐ কুশি, ঐ কুশি আসিয়াছে।” এই কথা বলিয়া সে পাগলের ন্যায় উৰ্দ্ধশ্বাসে কূপের দিকে দৌড়িল। আমিও তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ দীেড়িলাম। কিছুদূরে দেখি যে, সত্য সত্যই কুশি! টলিতে টলিতে কুশি আসিতেছে! লব তাহার গলা জড়াইয়া ধরিল, বলিল,- “কুশি, এতক্ষণ কোথায় ছিলে, ভাই! পাড়েনী বলে, তুমি স্বর্গে গিয়াছ। আমি বলিলাম, না পড়েনী, কুশি স্বর্গে যায় নাই। সে একলা কোথায় কোথাও যায় না। যেখানে যাই, আমার দুই জনে একসঙ্গে যাই। এখন চল, ভাই, বাড়ী চল। আমি তোমাক স্বৰ্গে যাইতে দিব না ।” অন্য সময় হইলে, বােধ হয়। ভূত বলিয়া আমার মনে ভয় হইত। কিন্তু তখন আমার জ্ঞান ছিল না। তাড়াতাড়ি গিয়া আমি কুশিকে কোলে লইলাম। কোলে লইয়া তাহাকে বাড়ী আনিলাম। কিন্তু ছেলে কথা কহে না। তাহার শরীর কৃশ, মুখ মলিন, মুখে যেন কালি মাড়িয়া দিয়াছে। মুখেহাতে তাহার জল দিলাম। ঘরে দুধ ছিল, তাহাকে খাইতে দিলাম, কিঞ্চিৎ সুস্থ হইলে কুশির মুখ দিয়া দুই-একটি কথা বাহির হইল। কি ঘটিয়াছিল, কুশির মুখ হইতে তখন ক্রমে ক্রমে সকল কথা জানিতে পারিলাম । w96*8 frig -ibs gas sell - www.amarboicons%