পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাড়েনীকে আর কিছু বলিবি? পায়রার কথা বলিয়াছিলি, তাহাতে কোন ক্ষতি ছিল না। কিন্তু আমার টাকার কথা প্ৰকাশ করিয়া দিলি কেন?” আমি বলিলাম,- “পাড়েনীকে আর কখন কিছু বলিয়া দিব না। তুমি আমাকে ছাড়িয়া দাও, আমি বাড়ী যাই। আমার জন্য লব হয়তো কত কাঁদিতেছে।” সে বলিল,- “এখনও নয়, আরও জব্দ করিয়া তাহার পর ছাড়িয়া দিব।” রামদীনের কাছে অনেক টাকা আছে, সাহেবদের কাপড় আছে। সে সকল আমাকে দেখাইল । তাহার পর সে টাকা গুণিতে বসিল । তাহার পর ঘরের ভিতর আমাকে বন্ধ করিয়া দ্বারে শিকল দিয়া, আজ রামদীন একবার বাহিরে গিয়াছিল। যদি আমি চীৎকার করি, তাহা হইলে আমাকে কাটিয়া ফেলিবে, এইরূপ ভয় দেখাইয়া সে একবারমাত্র অল্পক্ষণের নিমিত্ত বাজারে গিয়াছিল। বাজার হইতে পুরি আনিয়া সেও খাইল, আমাকেও খাইতে দিল। তাহার পর পুনরায় রাত্রি হইল। রামদীন নিদ্রা গেল। আজ আমি কোনরূপে পলাইব, এইরূপ মনে করিয়া জাগিয়া রহিলাম। অনেক রাত্রিতে রামদীনের ঘন ঘন নিশ্বাস পড়িতে লাগিল। যখন আমার নিশ্চয় বোধ হইল যে, সে নিদ্রা গিয়াছে, তখন আমি আস্তে আস্তে দ্বার খুলিয়া পলাইয়া আসিলাম ।” এই গেল। কুশির বিবরণ। পরদিন আমি রামদীনের নিকট গিয়া তাহার পায়ে-হাতে অনেক পড়িলাম। ঘরে আমার দুধ হইত, তাহাকে একলোটা দুধ দিলাম। ঘি করিয়া রাখিয়ছিলাম, সে ঘি তাহাকে দিলাম। বাজার হইতে পেড়া কিনিয়া দিলাম। এইরূপ বিধিমতে সান্তুনা করিয়া তাহাকে বলিলাম,- “বাবা! শিশু দুইটির মা নাই! র আশ্রয়ে আসিয়াছে। আমার নিকট কুশি কিছুমাত্র তোমার নিন্দা করে নাই। তোমার কি আছে, সে কথাও কিছু বলে নাই। আর যদি তুমি দু’পয়সা রোজগার করিয়া থাকস্লোিপতো ভাল কথা। সে কথা আমি গোপন রাখিব, কাহাকেও কিছু বলিব না। তুমি পাযরা ধরিয়া দিয়াছিলে, সে জন্য লবকুশি তোমার কত সুখ্যাতি করিয়াছিল। তুমি পাতকোর ভিতর না থাকিলে কুশি নিশ্চয় জলে পড়িয়া মারা পড়িত। ভাগ্যে সে সময় পাতকোর ভিতর ছিলে, তাই তাহার প্রাণ বঁচিয়াছিল। যদি বাছা, ছেলেটির তুমি প্রাণরক্ষা করিলে, তবে আর তাহাকে কিছু বলিও না।” কিছুদিন পরে ইংরেজের পুনরায় রাজত্ব হইল। দেশে পুনরায় বিচার-আচার আরম্ভ হইল, অরাজকতা ঘুচিল, লুটপাট, খুনখারাবি সব বন্ধ হইয়া গেল। দেশে পুনরায় শান্তি সংস্থাপিত হইলে, গোবিন্দবাবু হরডুই হইতে স্ত্রীকে আনাইয়া ও আমার নিকট হইতে ছেলে দুইটিকে লইয়া স্বদেশে চলিয়া গেলেন। আমাদিগকে পারিতোষিক স্বরূপ তিনি যে টাকা দিলেন, পাড়ে সেই টাকা দিয়া জমি লইয়া চাষ করিতে লাগিলেন । আজ দশ বৎসর হইল, পাড়ে পরলোকগমন করিয়াছেন। এক্ষণে আমি লোকের গম পিষিয়া ও নানাপ্রকার দুঃখ ধান্ধা করিয়া জীবিকানিকাৰ্বাহ করি। কিন্তু বাবু! ছেলে দুইটির জন্য এখনও আমার প্রাণ কাদে। সেই পৰ্যন্ত লব কুশির আমি কোন সংবাদ পাই নাই। তাহারা কোথায় আছে, কেমন আছে, বলিতে পারেন? ኳ যাহাদের নিকট পাড়েনী লব ও কুশির গল্প করিতেছিল, সেই বাঙ্গালীবাবুগণ উত্তর করিলেন,- “না, পাড়েনি!! আমরা তাহাদিগকে জানি না; যদি তুমি তাঁহাদের ঠিকানা বলিতে পারিতে, তাহা হইলে চিঠি লিখিয়া সংবাদ লইতে পারিতাম। তাঁহাদের বাড়ী কোন গ্রামে, কোন জেলায়, যখন তাহার কিছুই তুমি জান না, তখন কি করিয়া আমরা তাঁহাদের সন্ধান লইব?” এই কথা শুনিয়া, আপনার পারিতোষিক লইয়া বিরস বদনে পাড়েনী চলিয়া গেল।

gfrila is gas sel - www.amarboicon ولا\2008